বীরপাড়া: ৬৮টি চা বাগান রয়েছে আলিপুরদুয়ারে। তাই, চা শ্রমিকদের ভোট বরাবরই ওই লোকসভা নির্ণায়ক শক্তি। ভোটের মুখে নেতা-প্রার্থীদের কাছে চা শ্রমিকরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় বলা যেতে পারে, তাঁরাই এখন ‘ভিআইপি’। ভোটপ্রার্থীরা বলছেন, ‘ম্যায় তোহনি মনকি ঘরকি বেটা, ভাতিজা’। অর্থাৎ, আমি তোমাদেরই ঘরের ছেলে, ভাইপো।
জেলার বেশিরভাগ চা বাগানেই ঢোকার মুখে নদীগুলিতে সেতু নেই। বর্ষায় জলবন্দি হয়ে পড়েন শ্রমিকরা। শ্রমিক মহল্লাগুলির অসংখ্য রাস্তা বেহাল। হাজারো শ্রমিকের বাস জরাজীর্ণ ঘরে। বান্দাপানি, লঙ্কাপাড়ার মতো বেশ কয়েকটি চা বাগানে পানীয় জলের সমস্যাও প্রকট। তবে, সরকার তাঁদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এমনই দাবি তৃণমূল-বিজেপি দুই যুযুধান দলেরই। শ্রমিকদের দুয়ারে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, চা বলয়ে উন্নয়নের কৃতিত্ব রাজ্য সরকার অর্থাৎ দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পালটা বিজেপির বক্তব্য, পুরো কৃতিত্বই কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদির। বর্তমানে জেলায় আটটি চা বাগান বন্ধ। ভোটে জিতলে সেগুলি খোলাই হবে প্রথম কাজ, বলছে দুই দলই।
বস্তুত, ভোটের দামামা বাজার বহু আগেই আলিপুরদুয়ারের চা বলয় লোকসভা ভোটের প্রচারের এপিসেন্টার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটের সুর চড়তেই উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কৃতিত্ব নিয়ে দুই দলের দড়ি টানাটানিও বাড়ছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক বলছেন, ‘চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, বিনামূল্যে র্যাশনের ব্যবস্থা, চা সুন্দরী প্রকল্পে ঘর তৈরি, ক্রেশ হাউস, হাসপাতাল নির্মাণের ব্যবস্থা করেছেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।’ প্রচারে তৃণমূলের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরের বিজেপি সাংসদ জন বারলা ও আট বছরের বিধায়ক তথা এবারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা কোনও উন্নয়নের কাজই করেননি।
পালটা সিংহানিয়া চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলে মনোজ প্রচারে দাবি করেন, চা শ্রমিকদের জন্য বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলির টাকা আদতে কেন্দ্রীয় সরকারের। তিনি বলছেন, ‘আমি আপনাদের ঘরের ছেলে, পাশাপাশি বিধায়ক। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের প্রকল্পগুলির নাম বদলে আপনাদের ধোঁকা দিচ্ছে। সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’
অতীতে প্রভিডেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে বিধায়ক ও সাংসদের বাড়ির সামনে ধর্না দিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি তাঁরা চা বাগানে ১১ দিন ধরে একতা যাত্রা করেন। বিজেপি বিরোধী আবহ তৈরিই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য। তৃণমূলের চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি উত্তম সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চা শ্রমিকরা বিজেপির ধাপ্পা ধরে ফেলেছেন। তাই, তাঁরা বিজেপিকে বর্জন করেছেন।’ মনোজ বলেন, ‘মিথ্যে প্রচার করে তৃণমূলের লাভ হবে না। শ্রমিকরা জানেন তাঁদের আসল বন্ধু কে। লোকসভা ভোটের ফলেই একথা প্রমাণ হবে।’