প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ অগ্নিগর্ভ মণিপুরের আঁচ অনিবার্য ভাবে পড়তে চলেছে সংসদে৷ মণিপুর ইস্যুতে সংসদের উভয় কক্ষ – লোকসভা এবং রাজ্যসভায় অবিলম্বে শুরু হোক জরুরি আলোচনা, আলোচনার সময় সেখানে উপস্থিত থাকতে এবং বক্তব্য রাখতে হবে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগের দিন সরকারের পক্ষে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে এমনই দাবি তুলল সংঘবদ্ধ বিরোধী ফ্রন্ট – টিম ‘ইন্ডিয়া’। সর্বদলীয় বৈঠকে ‘ভারত ফ্রন্টে’র এমন সপাট দাবির মুখে কার্যত চরম অস্বস্তিতে পড়ল কেন্দ্রীয় শিবির৷
বুধবার, বর্ষাকালীন অধিবেশনের ঠিক আগে সর্বদলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে চাঁচাছোলা তোপ দাগেন বিরোধীরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিন সর্বদলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লির অন্দর মহলে প্রশ্ন উঠেছে, মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের এই আগ্রাসী ভূমিকার কথা আগেভাগে আঁচ করেই কী সর্বদলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত রইলেন মোদি? তাঁর বকলমে বৈঠকের পৌরহিত্য করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর নেতৃত্বে পীযুষ গয়েল, প্রহ্লাদ যোশী, অর্জুনরাম মেঘোয়ালের মত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বর্ষীয়ান প্রতিনিধিরা। কিন্তু বিরোধী দলীয় শিবিরের এই সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রীতিমত বেকায়দায় পড়েন তাঁরা, দাবি সংসদ সূত্রে।
মণিপুর ইস্যুতে উত্তপ্ত হতে পারে সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকের আবহ এটা আঁচ করতে পেরেছিল শাসক শিবির৷ যার ফলে, বৈঠকে গরহাজির ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ ঠিক সেই মুহূর্তে পরস্পরের সঙ্গে একজোট হয়ে বিরোধী শিবিরের সবাই মণিপুর ইস্যুতে সংসদের উভয় কক্ষে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার দাবি তুলেছেন৷ এই সমবেত দাবির কাছে কার্যত নতিস্বীকার করে এদিন বিজনেস অ্যাডভাইসারি কমিটি বা বিএসির বৈঠকে সরকারের তরফে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী জানিয়েছেন সরকার সংসদে মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত আছেন৷ বিএসি-তে অংশ নিতে গিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘দুই মাস পেরিয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নীরব। আমি অনুরোধ করতে চাই যে, তিনি দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নীরব ছিলেন কিন্তু তিনি অন্তত সংসদে একটি বিবৃতি দিন এবং আমাদের বিতর্ক করার অনুমতি দেন।’
বিএসি-র ছাড়পত্র পেলেও কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে পারেননি বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা৷ সর্বদল বৈঠকেও তাঁরা দাবি জানান মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে এই দাবি তুলে৷ বিরোধীদের এই দাবির সামনে রীতিমত অস্বস্তিতে পড়েন সরকারের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকের পৌরহিত্য করা বর্ষীয়ান মন্ত্রী রাজনাথ সিং৷ মণিপুর ইস্যুতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন কি না, সেই বিষয়ে এই মন্ত্রীরা কেউই সরাসরি কোনও জবাব দেননি৷ উল্টে বিজনেস অ্যাডভাইসারি কমিটির বৈঠকে সরকারের তরফে সওয়াল করতে গিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী দাবি করেন, বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের সন্ত্রাসের আবহ নিয়েও তাহলে সংসদে আলোচনা করা হোক৷ সূত্রের দাবি, বৈঠকে উপস্থিত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গেই জানান, বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের সন্ত্রাসের আবহ নিয়ে সংসদে আলোচনা করা হলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই৷
বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে গোটা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে মণিপুরে পা দিয়েছেন ডেরেক ও ব্রায়েন৷ তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দোলা সেন এবং সদ্য প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব৷ জাতি দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই বুধবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে ডেরেকের দাবি, ‘মন কি বাত আমরা অনেক শুনেছি৷ এবার আমরা মণিপুর কি বাত শুনতে চাই৷ আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী আপনি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় মণিপুর ইস্যুতে বক্তব্য রাখুন৷ তা না হলে মণিপুর নিয়ে নীরব থাকার পরে সংসদ রুদ্ধ করার দায়ে আপনাকে অভিযুক্ত করা হবে৷’