প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ বেঙ্গালুরু সামিটে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তবু ‘ইন্ডিয়া ফ্রন্টে’র বৈঠকে ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রসঙ্গ। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ যে লড়াইয়ের ঘোষণা করেছে বিরোধী দলগুলি, ‘ইউপিএ’ বিলুপ্ত করে মহাজোটের নাম রাখা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ অর্থাৎ ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’, বেঙ্গালুরু সামিটে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির মধ্যে যে ইতিবাচক রসায়ন দেখা গেছে, সে প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠেছে আঞ্চলিক স্তরে এই সমন্বয় ধরে রাখার ক্ষেত্রে কতটা নমনীয় হবেন অধীররঞ্জন চৌধুরী ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস; সে নিয়েই সন্দিহান কংগ্রেস তথা রাজ্যের শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত বেঙ্গালুরু সামিটে ২৬ টি বিরোধী দলীয় শিবিরের একত্রে, একমঞ্চে পাশাপাশি অধিষ্ঠান, সর্বোপরি দীর্ঘদিন বাদে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে যে অভাবনীয় মেলবন্ধন চোখে পড়েছে তা দেখেই তৃণমূল কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতার কটাক্ষ, ‘এই দৃশ্য দেখলে অবধারিত অধীররঞ্জন চৌধুরীর ঘুম উড়ে যাবে।’ অর্থাৎ কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ ফ্রন্ট মজবুত হলে অবধারিত প্রভাব পড়বে অধীরবাবুর উপরে৷ অন্যদিকে লালুপ্রসাদ যাদব এর মতো বর্ষীয়ান নেতাও মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর সামিটে উপস্থিত হয়ে কংগ্রেস সভাপতি খড়গের উদ্দেশ্যে নাম না করেই অধীরকে সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন, তেমনই বার বার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হতে বারণ করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেতা ভগওয়ান্ত মানকেও। এই প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী কী ভাবছেন তাও জল্পনা উস্কে দিয়েছে অনেকটাই।
বুধবার অধীর চৌধুরী সরাসরি জানিয়েছেন, ‘আমি যা বলি বা যা করি, তা দলের ভালোর জন্যই৷ রাজ্যে পার্টি বাঁচানোর দায়িত্ব আমার৷ তা-ই কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যারা হামলা করবে তাদের বিরুদ্ধে বলা, লড়াই করা আমার কর্তব্য৷ সেটা আমি করবও৷’
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও বর্ষীয়ান সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী ঘোষণা করেছিলেন, কংগ্রেস এবং বাম দলগুলি যৌথভাবে বাংলায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়বে। কিন্তু এরই মধ্যে ‘বেঙ্গালুরু সামিটে’ বিরোধী দলগুলির সব স্ট্র্যাটেজি, পারস্পরিক মতবিরোধ বা যাবতীয় পুরনো খোলনলচে সব আমূল পালটে গিয়েছে। প্রকাশ্যে এসেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের বেনজির সখ্যতা৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই সখ্যতা পছন্দ নয় প্রদেশ কংগ্রেসের৷ যদিও বৈঠকের পর প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে সরকারি কোনও বক্তব্য সামনে আসেনি, তবে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের একাংশ যে ক্ষুব্ধ তা পরিষ্কার। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা কৌস্তব বাগচী, সুমন রায় চৌধুরী প্রমুখরা কোনও রাকঢাক না রেখেই বলছেন, এই জোটের বিরুদ্ধে তাঁরা। স্বাভাবিক ভাবেই, উঠে এসেছিল কট্টর তৃণমূল বিরোধী অধীরের মতামত কী তা নিয়ে প্রবল জল্পনা।
বুধবার এই প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরীর সাফ জবাব, ‘আমার অবস্থান আগেও যা ছিল, এখনও তাই। আমি কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি৷ দল আমাকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, আমি যা পালন করছি এবং তা ভবিষ্যতেও প্রাণ দিয়ে তা রক্ষা করব।’ অধীরের দাবি, বিজেপিকে হারাতে জোট প্রয়োজন। তা বলে তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতায় রাজী নই। রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী নির্দেশ দেবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। পঞ্চায়েত ভোটে যে কর্মীরা খুন হয়েছেন তাঁদের এখনও শ্রাদ্ধ-শান্তি হয়নি। আর তার মধ্যেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের এক টেবিলে বসা মানুষ ভালোভাবে নেবে না। তৃণমূলের সঙ্গে যদি আমাদের জোট করতে হয়, তাহলে সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের কাছে মুখ দেখাব কীভাবে? অধীরের মতে, ‘সেই মানুষগুলো ঝান্ডা নিয়ে দল করছে। গ্রামে তাঁরা পার্টি করতে গিয়ে মার খাচ্ছে তৃণমূলের হাতে। এরপরও যদি নেতারা বলে, জোট করতে হবে সে ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। আমাদেরও তখন হয়তো সেই নির্দেশ মানতে হবে। তবে খারাপ লাগবে। সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের কথা ভেবে।’