শিলিগুড়িঃ শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির যন্ত্রাংশে আগুন। অল্পের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেল সাহুডাঙ্গি শ্মশান। প্রাণে বাঁচলেন দেহ সৎকার করতে আসা শ্মশানযাত্রীরা। মঙ্গলবার রাতে দেহ দাহ চলাকালীন আচমকাই আগুন লেগে যায় শ্মশানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশে। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। পরে ফুলবাড়ি থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন আয়ত্তে আনে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উত্তেজিত জনতার রোষে পড়তে হয় শ্মশানের কর্মীদের। পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্মশানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে অনুমান দমকলের।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে আমবাড়ি, পানিকৌড়ি, পোড়াঝাঁড় এলাকা থেকে সৎকার করতে একের পর এক দেহ আসে সাহুডাঙ্গি শ্মশানে। সেই সময় একটি দেহ দাহ হচ্ছিল চুল্লিতে। আচমকাই শ্মশানের বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশে আগুন লেগে যায়। আকাশের দিকে ধোঁয়া ওঠার পাইপ থেকে আগুনের ফুলকি বেরোতে দেখা যায়। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন উপস্থিত শ্মশানযাত্রীরা। বন্ধ হয়ে যায় দেহ দাহ করার কাজ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফুলবাড়ি দমকলের একটি ইঞ্জিন। কিছুক্ষণের প্রচেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনেন দমকলকর্মীরা। প্রায় ঘন্টাখানেক বন্ধ থাকে দেহ করার কাজ।
এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন সৎকার করতে আসা মানুষজন। উত্তেজিত জনতার ঢিল থেকে কোনওক্রমে লুকিয়ে প্রাণে বাঁচলেন কর্মীরা। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে আসে বিরাট পুলিশ বাহিনী। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে শ্মশানযাত্রীদের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক চুল্লির ঘরে আগুন লেগে গেলেও দমকলে খবর দিতে দেরি করেন শ্মশানের কর্মীরা। যেভাবে ধোঁয়া বেরোনোর পাইপ দিয়ে আগুনের ফুলকি বেরোচ্ছিল তাতে যেকোনও মুহূর্তে উচ্চ স্তম্ভ পাইপটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা ছিল। তাতে প্রাণহানীর মতো ঘটনাও ঘটতে পারত বলে মনে করছেন শ্মশানযাত্রী বিপিন রায়, সরোজ মণ্ডল, নিতাই মজুমদাররা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে শ্মশানের কর্মীরা জানান, ‘ঘটনায় আমরাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। সময় মত দমকলকে খবর দেওয়া হয়েছে’। শ্মশানযাত্রী মন্টু সরকারের বক্তব্য,”মৃতদেহ দাহ করতে এসে নিজেরাই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেঁচেছি।”
সাহুডাঙ্গির বৈতরণী শ্মশান রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)। এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন থেকে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম গুলির সংস্কার করা হয় না। খামতি রয়েছে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার। পর্যাপ্ত জলেরও ব্যবস্থা নেই শ্মশানঘাটে। ফলে আরও বড় দুর্ঘটনা হতে পারত বলে শ্মশান কর্মীদের ধারণা।
বৈদ্যুতিক চুল্লির যন্ত্র ও সরঞ্জামে গন্ডগোল থাকার কারণেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটতে পারে বলে দমকলের তরফেও অনুমান করা হচ্ছে। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, “সম্ভবত মেশিনে অনেকদিন থেকে সমস্যা রয়েছে। সময় মত আসার জন্য বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে।”
এদিনের ঘটনা সম্বন্ধে এসজেডিএ চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি, সম্ভবত বিদ্যুতের ভোল্টেজ আপডাউন এর কারণে এরকমটা হয়ে থাকতে পারে। তবে বিষয়টিকে হালকা ভাবে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।”