ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: ফালাকাটার (Falakata) দশমী ঘাটের বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে ছোট্ট একটি টেবিল পাতা। নড়বড়ে সেই টেবিলের উপর একটি ছাতা লাগানো। তাতে আবার ঝুলছে একটি ব্যানার। সেখানে বড় বড় করে লেখা রয়েছে টেট উত্তীর্ণ লটারিওয়ালা (TET passed lottery seller)। নীচে নড়বড়ে টেবিলে লাগানো আরেকটি ফ্লেক্স। সেখানে লেখা বাপি মণ্ডল, এমএ, বিএড (MA B.Ed)। শহরের পথচলতি প্রায় সকলেরই চোখ টানছে সেই লেখা। কৌতূহলী হয়ে অনেকেই দোকানে ভিড়ও করছেন।
লটারির দোকান খুলেছেন শিক্ষিত যুবক বাপি মণ্ডল। তাঁর বাড়ি শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুপাড়ায়। স্নাতকোত্তর করার পর করেছেন বিএড। বহু পরীক্ষায় সফল হলেও শেষমুহূর্তে আটকে যায়। তাই মেলেনি চাকরি। বিএড থাকায় বসেছিলেন প্রাথমিকের টেটে। তাতে উত্তীর্ণও হন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এবারও বাদ। তাই শেষপর্যন্ত সংসার চালাতে খুলেছেন লটারির টিকিট বিক্রির দোকান। সারাদিনে ৪০০ টিকিট বিক্রি করে যা সামান্য আয় হয় তা দিয়েই এখন চালাচ্ছেন সংসার।
বাবুপাড়ার কৃষ্ণ মণ্ডল ও সুচিত্রা মণ্ডলের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বাপি বড়। ছোট ভাই বাইরে কাজ করেন। আর বোন ফালাকাটা কলেজে পড়ছেন। বাপির বাবাও লটারির টিকিট বিক্রি করতেন। মা সুচিত্রাদেবী মানুষের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে তিনি এখন আর তেমন কাজ করতে পারেন না। বাপি ফালাকাটা হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ২০১৪ সালে ইতিহাসে অনার্সে ৫১ শতাংশ নম্বর নিয়ে বিএ পাশ করেন। ২০১৬ সালে ইতিহাসেই করেন স্নাতকোত্তর। এরপর ২০১৮ সালে বিএডও সম্পূর্ণ করেন। বিএড থাকায় ২০২২ সালে প্রাথমিক টেটে বসে ৯১ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হন। ভেবেছিলেন শিক্ষকতার চাকরি পাবেন। কিন্তু বোর্ড বিএডদের প্রাথমিক টেটে গণ্য নয় বলে জানিয়ে দেয়।
এরপর প্রায় এক বছর ধরে বাবার দোকানে লটারির টিকিট বিক্রি করছেন বাপি। তবে সম্প্রতি বাপি মণ্ডলের লটারির দোকান সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। কারণ কাউন্টারের সামনে তাঁর ডিগ্রি লেখা হয়েছে।
বাপি মণ্ডল বলেন, ‘বাবা লটারির টিকিট বিক্রি করে আর মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমাকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন। উচ্চশিক্ষিত হয়ে ভেবেছিলাম একটা সরকারি চাকরি পাব। টেট উত্তীর্ণও হই। কিন্তু একটা চাকরিও জুটল না। তাই বাধ্য হয়ে সংসার চালাতে এখন লটারির টিকিট বিক্রি করছি।’ তবে এখনও স্বপ্ন দেখেন, হয়তো একদিন ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। তাঁর ভাগ্যে সরকারি চাকরি জুটবে।