প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ রাজ্যসভার কার্যবিরণী সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে ছেঁটে (এক্সপাঞ্জ) ফেলা হল তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা, বর্ষীয়ান সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য৷ বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় মণিপুর ইস্যুতে সংসদীয় রুল ২৬৭ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ আলোচনার দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেছিলেন ডেরেক৷ মণিপুর পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতাকে হাতিয়ার করে ডেরেক বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর ইস্যুতে সংসদে মুখ খুলতেই হবে৷ এদিকে মণিপুর জ্বলছে আর প্রধানমন্ত্রী সংসদ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ এটা হতে পারে না।’ এরপরেই রাজ্যসভার সচিবালয়ের তরফে জানানো হয় তারা ডেরেকের মন্তব্য ছেঁটে ফেলেছেন রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে৷
প্রসঙ্গত, সংসদের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্যসভার সচিবালয় সূত্রে দাবি, বৃহস্পতিবার সংসদে দাঁড়িয়ে যে ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সম্বোধন করেছিলেন ডেরেক, তা পুরোপুরি সংসদীয় রীতি বিরূদ্ধ৷ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সংসদের উচ্চকক্ষের সচিবালয়ের এহেন আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন৷ শুক্রবার রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালীন এই ইস্যুতে সরাসরি ‘ওয়েলে’ নেমে ক্ষোভ জানান ডেরেক, এমনকি ‘হাই টেবিলে’র কাছে পৌঁছে স্বয়ং চেয়ারম্যানের কাছেই জানতে চান কেন তাঁর মন্তব্য বাদ দেওয়া হল? ডেরেকের প্রশ্নের কোনও জবাব না দিয়ে সভার কাজ মুলতুবি করে উঠে যান চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়। এখানেই না থেমে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে অফিসিয়ালি চিঠি লিখে তাঁর মন্তব্য ছেঁটে ফেলার কারণ জানতে চেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, একইসঙ্গে দাবি করেছেন অবিলম্বে তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য রেকর্ডভুক্ত করতে হবে, দাবি সংসদীয় সূত্রের৷
উল্লেখ্য, শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে ডেরেকের প্রশ্ন, ‘আমি কি এমন অসংসদীয় শব্দ উচ্চারণ করেছি যে তা ছেঁটে ফেলা হবে? আমি শুধু বলতে চেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যসভায় এসে মণিপুর ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য জানান৷ এই দাবি জানানোর অপরাধেই আমার বক্তব্য ছেঁটে ফেলা হল৷’ এই মর্মে তাঁর সংযোজন, ‘এর আগে দেখা গিয়েছে সংবাদ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার নিয়েও সেন্সর শিপ জারি করেছে সরকার৷ এখন সংসদের ভিতরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কন্ঠরোধের জন্যও এহেন অনৈতিক সেন্সরশিপই হয়েছে মোদি সরকারের হাতিয়ার৷’ তবে তিনি যে তাঁর অবস্থান থেকে সরছেন না, ভবিষ্যতে একই সুর এবং ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাতে পিছপাও হবেন না, সেই কথা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।