রায়গঞ্জঃ অভিযোগকারী যুবতীকে বিয়ে করলেই মিলবে জামিন! বিচারকের কাছ থেকে এমন প্রস্তাব পেয়েই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন এক বিচারাধীন যুবক। তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সহবাসের অভিযোগ রয়েছে। বিচারকের নির্দেশ মতো রায়গঞ্জ সংশোধনাগারের ভেতরে সরকারী খরচেই বিয়ের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতেই সাত পাকে বাঁধা পড়ল অভিযোগকারী যুবতীর সঙ্গে অভিযুক্ত যুবক।
জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বিশাল মাউরিয়ার সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রায়গঞ্জের বীরঘই গ্রামের বাসিন্দা এক আদিবাসী যুবতীর। বিশাল কর্মক্ষেত্রে থাকতেন হরিয়ানার পানিপথে। পরবর্তীতে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদিবাসী যুবতীকে নিয়ে যায় পানিপথে। সেখানে প্রায় একবছর দুজনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতেন এক ভাড়া বাড়িতে। পরবর্তীতে বিশাল যুবতীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। যুবতীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি যুবতীকে মারধোর দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় অভিযুক্ত যুবক। পানিপথে থেকে যুবতী সব কিছু হারিয়ে ফিরে আসেন নিজের গ্রাম রায়গঞ্জের বীরঘইতে। গত ৮ মে যুবতী অভিযুক্ত যুবক বিশাল মাউরিয়ার নামে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগ দায়েরের পরই রায়গঞ্জ পুলিশের একটি দল উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে বিশাল ও তাঁর বাবা সঞ্জয় মাউরিয়াকে। এরপর ১০ মে তাদের দুজনকেই তোলা হয় রায়গঞ্জ আদালতে। সেখানে বিশালকে ৮ দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। অপর ধৃতকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।
এদিকে পুলিশ হেফাজত শেষে মঙ্গলবার অভিযুক্ত বিশালকে তোলা হয় রায়গঞ্জ আদালতের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজ করিম চৌধুরীর এজলাসে। সেখানে অভিযুক্তের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে বিচারক অভিযোগকারী যুবতীকে বিয়ে করার শর্তে জামিন দিতে রাজি হন। সেই শর্তে রাজি হয়ে যান বিশাল। এরপরই সম্পূর্ণ বিচার বিবেচনা করে রায়গঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে বিয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন বিচারক করিম চৌধুরী। সেই সঙ্গে বিয়ের সময় ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকেও সংশোধনাগারে থাকার নির্দেশ দেন তিনি। দুজনের বিয়ের সরকারি শংসাপত্র আদালতে দাখিল করলেই অভিযুক্ত বিশাল ও তাঁর বাবা সঞ্জয়কে জামিন দেওয়া হবে। এই মর্মে এদিন জেল সুপারকে লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এদিকে আদালতের নির্দেশ মেনে এদিনই রায়গঞ্জ সংশোধনাগারেই অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে অভিযোগকারী যুবতীর বিয়ের যাবতীয় বন্দোবস্ত করে ফেলেছে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। পুলিশ হেফাজত থেকে ধৃত বিশালকে বিয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে সংশোধনাগারে। সেখানেও এসেছেন অভিযোগকারী যুবতী। রাত ১২ টার লগ্নে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হবে। হবে রেজিস্ট্রিও। এই বিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়ণ ছড়িয়েছে সংশোধনাগার চত্বরে।