নাগরাকাটাঃ শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বামনডাঙ্গার সমস্যা মিটলো বলে দাবি। মঙ্গলবার সকালে সেখানকার পরিচালকরা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে ঠিক হয়েছে ২০২২ সালে বর্ধিত মজুরির এরিয়ারের বকেয়া নিয়ে পুজোর পর পদক্ষেপ করা হবে। চলতি বছরের বর্ধিত মজুরির এরিয়ার পুজোর আগেই দিয়ে দেওয়া হবে। বেশ কয়েক মাসের বকেয়া প্রভিডেন্ড ফান্ড কিভাবে কিস্তিতে শোধ দেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে দ্রুত মালিকপক্ষ পিএফ দপ্তরের সঙ্গেও কথা বলবে। বুধবার থেকেই শুরু হবে বকেয়া সাল ছুটি দেওয়ার কাজ।
সম্প্রতি বামনডাঙ্গা চা বাগানের মালিক ও ট্রেড ইউনিয়ন একজোট হয়ে অন্য শ্রমিকদের অন্ধকারে রেখে বেশ কয়েক জনকে অবৈধ উপায়ে নতুন নিয়োগ করেছেন এমন ইস্যুতে অসন্তোষ চরমে ওঠে। সেই নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে বলেও বাগান কর্তৃপক্ষ এদিন ঘোষণা করে দেয়। ম্যানেজার সৌম্য ঘটক বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটেছে। শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ করা হবে। আশা করছি এবারে শ্রমিকরা সুষ্ঠভাবে বাগান চালাতে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। ৭ জন শ্রমিকের নয়া নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর এদিনের ৪ ঘন্টার বৈঠকটি ছিল যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ। কাউকে কিছু না জানিয়ে ৯ জনকে শ্রমিক হিসেবে নতুন নিয়োগের পর ওই বাগানটির ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের ওপর তাঁরা যে আস্থা রাখছেন না সেকথাও শ্রমিকরা সমস্বরে তুলে ধরেন। বিস্তর ঘাত প্রতিঘাতে ভরা আলোচনার শেষে ম্যানেজার দাবি দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিলে তবে শান্তি ফেরে।
চলতি আবহে নাগরাকাটার প্রত্যন্ত বাগানটিতে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। এরপর থেকে সেখানে অচলাবস্থা চলছিল। স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারন শ্রমিকরা। নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে শ্রমিকদের একাংশ। এদিনের বৈঠকেও নেতাদের আমলই দেওয়া হয় নি। কথা বলেছেন শ্রমিকরাই। পরিস্থিতি দেখে সেখানে উপস্থিত তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সঞ্জয় কুজুর সংগঠনের বর্তমান ইউনিট কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেন।
এদিন সঞ্জয় বলেন, ‘দ্রুত নয়া পদাধিকারীদের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে। নতুন নিয়োগের বিষয়টি সত্যিই রহস্যজনক। কোথাও যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তা মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই।’ তৃণমূলের মতো বামনডাঙ্গার বিজেপির ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও শ্রমিকদের রোষানলের বাইরে ছিলেন না। এদিনের সভায় হাজির হন গেরুয়া শিবিরের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক মনোজ ভুজেল, দলের অন্যতম শীর্ষ শ্রমিক নেতা সন্তোষ হাতি। মনোজ বলেন, নিয়োগ কাণ্ডে আমাদের নেতাদের ভূমিকা নিয়েও সবিস্তারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পদক্ষেপ করা হবে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারাই যাতে সেখানে দ্বায়িত্বে থাকেন তা নিশ্চিত করা হবে।
ডায়না ও গরুমারার জঙ্গল ঘেরা বামনডাঙ্গার বর্তমান পরিচালকরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাগান চালাচ্ছেন। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর একবার বাগানটি বন্ধও হয়। পরে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে খোলে। ফের সেপ্টেম্বর থেকে পাওনাগন্ডা সহ শ্রমিক নেতাদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ শুরু হয়।