মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি: ভোটের আগে সেতু ও রাস্তা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হাতিঘিসার বস্তি সহ জমিদারগুড়ি। গত দশ বছরে নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাহনঝরা নদীতে সেতু ও রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে, বাসিন্দারা বিপজ্জনক রাস্তায় চলাচলে বাধ্য হচ্ছেন। এক সময় আদর্শ গ্রাম তৈরির জন্য তৎকালীন বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া হাতিঘিসাকে দত্তক নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুই করেননি। সাংসদ বদল হলেও কাজ কিন্তু আজও থমকেই আছে।
দেখা গেল, বাহনঝরার মাঝে তিনটে পিলার দাঁড়িয়ে। নির্মীয়মাণ রাস্তায় পাশে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রংচটা লোহার বোর্ড ঝুলছে। নদী পেরিয়ে জঙ্গল বস্তির দিকে যেতেই মাটির এবড়োখেবড়ো রাস্তা। ওই রাস্তায় বাইক নিয়ে চলা যেন মৃত্যুকে হাতছানি দেওয়া। উলটোদিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানে ঠাসাঠাসি ভিড় জনা তিরিশেক মহিলার। সম্ভবত বাগান শ্রমিক। তাঁদেরই একজন অঞ্চুলি গোয়ালা বলেন, ‘আমরা হুচাই মল্লিকজোতের বাসিন্দা। রোজ এভাবেই চা বাগানে কাজে যাই। রাস্তার জন্য অন্য গাড়িওয়ালা এপথ মাড়ায় না। তাই, এক গাড়িতে গোরু-গাধার মতো যেতে হয়। রাস্তা, সেতু হলে এভাবে যেতে হত না।’ স্থানীয় বাসিন্দা সমীর সিংহ জানান, এখন শান্ত হলেও বর্ষায় এই নদী ফুলে ওঠে। তখন আর এপথ নয়, দশ কিলোমিটার ঘুরে হাতিঘিসা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। গত দশ বছরে বাহনঝরার জলে বয়ে গিয়েছে নেতাদের গালভরা প্রতিশ্রুতি। বাসন্তী গোয়ালার কথায়, ‘আমাদের কষ্ট কেউ বোঝে না। রাস্তা, সেতু হবে বলে দশ বছর আগে কাজ শুরু হয়েছিল। কিছুদিন পরই মাঝপথে সব থেমে যায়। কেন বরাদ্দ টাকার কাজ আটকে গেল আজও অজানা। ভোটে জিতেও কেউ কাজ শুরুতে পদক্ষেপ করে না। ফল ভুগছেন এলাকাবাসী।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের উদ্যোগে হাতিঘিসার জমিদারগুড়ি থেকে জঙ্গলবস্তি সংযোগকারী দুটি গ্রামের মাঝে বাহনঝরা নদীতে কংক্রিটের সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। এজন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৯০ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। তিন মাসে সেতু তৈরি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে তিনটি পিলার তৈরি করে নির্মাণকারী সংস্থা উধাও হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, জমিদারগুড়ি, হুচাই মল্লিকজোত, জঙ্গলবস্তি, কেটুগাবুর, বীরসিংজোত, বিজয়সিং প্রভৃতি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ দৈনিক নদী পেরিয়ে যাতাযাত করেন।
বাহনঝরার দুই পারে মোট ছ’টি অঙ্গনওয়াড়ি, একটি শিশুশিক্ষাকেন্দ্র, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চবিদ্যালয় রয়েছে। গ্রামে কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র না থাকায় প্রসূতি সহ রোগীদের এপথেই যেতে হয়। স্থানীয় সিপিএম নেতা মাধব সরকারের অভিযোগ, বিজেপি-তৃণমূল দ্বন্দ্বে কাজ আটকে আছে। যদিও দুই দলেরই স্থানীয় নেতৃত্ব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।