নাগরাকাটা: এরাজ্যের উত্তরবঙ্গ, বাংলাদেশ নেপাল। গা ঘেষাঘেষি করে থাকা তিন প্রতি প্রতিবেশী দেশেরই চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের পরিস্থিতি ভালো নয়। বাংলাদেশের চা শিল্প মহলের সঙ্গে মত বিনিময় করে সেখান থেকে ফিরে এসে এমনটাই উপলব্ধি উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিক নেতা মণি কুমার দার্নাল সহ তাঁর সঙ্গে থাকা আরও দুই প্রতিনিধি সঞ্জয় চৌধুরী ও ত্রিদিবেশ তালুকদারের। নেপাল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের নেতা শ্রীহরি নেপাল, দীপক কুমার তামাং ও সীতা সাপকোটারাও বাংলাদেশে আমন্ত্রিত ছিলেন। গত মঙ্গলবার প্রত্যেকে যে যার দেশে ফিরে আসেন। কংগ্রেস প্রভাবিত চা শ্রমিক সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস ইউনিয়নের (এনইউপিডব্লিইউ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম আহ্বায়ক মণি কুমার বলেন, ‘আমাদের এখানকার সঙ্গে বাংলাদেশ বা নেপালের চা শ্রমিকদের আর্থ সামাজিক অবস্থার বিরাট কোনও ফারাক নেই। শুধু উত্তরবঙ্গে মজুরি সামান্য বেশি। বাকি সুযোগ সুবিধা থেকে প্রতিবেশী দেশগুলির বেশিরভাগ চা বাগানের শ্রমিকদের বঞ্চিত হওয়ার কাহিনী হুবুহু একই। বাংলাদেশ ঘুরে এসে ও নেপালের চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই ধারণা আরও পরিষ্কার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।‘
মণি কুমাররা গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশে যান। সেখানে সিলেট ডিভিশনের লাক্কাটুরা, মালনিছেঁড়া ও জাফলং এই ৩ বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁরা সরাসরি কথা বলেন। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভিবাজার এলাকার আরও কয়েকটি বাগানে তাঁদের যাওযার কথা থাকলেও সম্প্রতি সেদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র ডাকা একটি সমাবেশকে ঘিরে পরিস্থিতি হিংসাত্মক হয়ে উঠলে আর যেতে পারেননি। বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর সেখানকার একমাত্র চা শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তাঁরা আলাদা করে বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি রাজু গোয়ালা ও সম্পাদক দেবকুমার দাস বাউরি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে মূলত সিলেট ডিভিশনের দুটি জেলাকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬০টি চা বাগান রয়েছে। কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যা লক্ষাধিক। তাঁদের বেশিরভাই অস্থায়ী। মজুরি মেলে ১৭০ টাকা। বাড়ি ঘর, চিকিৎসা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের মতোই সেখানেও অভাব অভিযোগের অন্ত নেই। বাংলাদেশের চা বাগানে আদিবাসী ও নেপালি শ্রমিকরাও রয়েছেন। একই পরিস্থিতি নেপালে। সেখানে মজুরি মেলে নেপালের মুদ্রায় ৫০০ টাকা। যা ভারতীয় মুদ্রায় উত্তরবঙ্গের বর্তমান মজুরি ২৫০ টাকার কম। মণি কুমার দার্নাল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘের নীতিই হল সম কাজে সম মজুরি। সেটা এই উপ মহাদেশের কোথাও রক্ষিত হচ্ছে না। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।‘
ফ্রেডরিক ইবার্ট স্টিফটাং নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ শাখার আমন্ত্রণ পেয়ে উত্তরবঙ্গ ও নেপালের ওই চা শ্রমিক নেতারা মত বিনিময়ের জন্য সেদেশে গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন ও ভারতের প্রতিনিধি মধুমিতা সেনগুপ্ত। দুজন যথাক্রমে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটার ও প্রোগ্রাম অ্যাডভাইসারের দায়িত্বে ছিলেন।