Wednesday, May 31, 2023
Homeজাতীয়'অধ্যাদেশে' শান্তি নেই, রিভিউ পিটিশন দায়ের করল সরকার

‘অধ্যাদেশে’ শান্তি নেই, রিভিউ পিটিশন দায়ের করল সরকার

নয়াদিল্লি: শুক্রবার রাতেই তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি করে, কার্যত সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল্লির প্রশাসনিক শাসনভার ফের নিজেদের দখলে নিল মোদি সরকার। অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্সের মেয়াদ বা কার্যকাল টেনেটুনে ছয় মাস, আর সেই তত্ত্বকেই নজরে রেখে শনিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে অসম্মতিপ্রকাশ করে শীর্ষ আদালতে পালটা রিভিউ পিটিশন দায়ের করল কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ এই আবহে ফের একবার এই মামলাটি গেল সুপ্রিম কোর্টে। গত ১১ মে-এর সুপ্রিম নির্দেশিকার বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এদিকে অপরদিকে আম আদমি পার্টি জানিয়েছে, কেন্দ্রের নয়া অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে তারা। কেন্দ্রের এই অধ্যাদেশকে ‘আদালত অবমাননা’র শামিল বলে অভিযোগ তুলেছে দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টি। রাজধানী দিল্লির স্বায়ত্তশাসনের অধিকারীকে, তা নির্ধারিত করতে আরও একবার শীর্ষ আদালতে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে চলেছে বিজেপি ও আম আদমি পার্টি, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

উল্লেখ্য, দিল্লির প্রশাসনিক শাসনভার নিয়ে দিন কয়েক আগেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বড়সড় স্বস্তি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। উচ্চপদস্থ আমলাদের বদলির বিষয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, পুলিশ প্রশাসন ও ভূমিজ সংস্কার ব্যতিত যাবতীয় রাজ্য সরকারি দপ্তর ও আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দিল্লির সরকারের রয়েছে। তবে শুক্রবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে ফের সেই ‘অধিকার’ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ দিল্লি (এনসিআরডি) অ্যাক্ট নতুন একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে গতরাতের অধ্যাদেশের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে ইউপিএসসি পাশ করা আমলাদের থেকে দিল্লির জন্য পৃথক ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া দিল্লি সাবঅর্ডিনেট সার্ভিসেস বোর্ড (এসএসবি) থেকেও নিয়োগের ক্ষমতা চলে গিয়েছে কেন্দ্রের হাতেই। উল্লেখ্য, এর আগে আলাদা করে দিল্লির জন্য কোনও ক্যাডার ছিল না ইউপিএসসি-র থেকে। এই নয়া সিভিল সার্ভিস অথরিটির মাথায় থাকবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে থাকবেন দিল্লির মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব। তাঁরা সম্মিলিতভাবে বদলি বা নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ পাঠাবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে। এরপর নিজের ইচ্ছে মতো সেই সুপারিশ গ্রহণ বা খারিজ করতে পারবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। এমনি রাজ্যের ক্ষেত্রে যেভাবে রাজ্যপালকে সরকারের পরামর্শে চলতে হয়, জাতীয় রাজধানী দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে সেভাবে সরকারের পরামর্শে চলতে হয় না। তাঁর ক্ষমতা কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের থেকে বেশি। এই পরিস্থিতিতে কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন সার্ভিসেস অথরিটি যদি কোনও সুপারিশ করেও, তা মানতে বাধ্য থাকবেন না লেফটেন্যান্ট গভর্নর।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে একটি আইন এনে দিল্লির আমলা নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়েছিল কেন্দ্র। তবে গত ১১ মে-র নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, এই সংক্রান্ত ক্ষমতা থাকা উচিত জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের হাতেই। কিন্তু গতকাল রাতে মোদীর নেতৃত্বাধীন ক্যাবিনেট একটি অধ্যাদেশ এনে ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সার্ভিসেস অথরিটি’ অর্থাৎ একটি পৃথক ক্যাডার গঠন করে। ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ দিল্লি অ্যাক্ট, ১৯৯১কে সংশোধন করে এ বিতর্কিত অধ্যাদেশ এনেছে মোদি সরকার। এই আবহে ফের একবার দিল্লির আমলাদের বদলির ক্ষমতা চলে গেল কেন্দ্রীয় সরকারেরই হাতে। নয়া অধ্যাদেশের ফলে আমলা বদলির ক্ষেত্রে ফের একবার ‘শেষ কথা’ হয়ে উঠলেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর। কিন্তু অর্ডিনান্সের স্থায়িত্ব মাত্র ছ মাস। সে ক্ষেত্রে জরুরি বিচারবিভাগীয় আওতায় যথাযথ আইন প্রণয়ন। এদিকে অর্ডিন্যান্স জারী করে ইতিমধ্যেই শীর্ষ আদালতের রায়কে ছ মাসের জন্য টেক্কা দিতে সক্ষম হলেও, তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব তথা কার্যপ্রণালী ক্রমে বাধ্যবাধকতা ও নানাবিধ বিমুখ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে, তৎসহ আইনের চোখে নিজেদের স্বচ্ছ প্রমাণিত করার তাগিদেই ফের রিভিউ পিটিশন দায়ের করল কেন্দ্র সরকার। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের রিভিউ পিটিশন-এর শুনানিতে কতটা গুরুত্ব দেয় শীর্ষ আদালত, সেটাই এখন দেখার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments