সাগর বাগচী ও খোকন সাহা, শিলিগুড়ি ও বাগডোগরা: ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC 2023 Topper) পরিচালিত সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে চমক দিলেন দার্জিলিং (Siliguri) জেলার তিন কৃতী সন্তান। কারও কাছে এই সাফল্য ঠাকুরদার স্বপ্নপূরণ, কারও আবার প্রয়াত বাবার। মেধাতালিকায় ৫২ নম্বর জায়গা করে নিয়েছেন দার্জিলিং শহরের সেভেন রবার্টসন রোডের বাসিন্দা জয়শ্রী প্রধান। জয়শ্রীর সাফল্যে খুশির হাওয়া শৈলশহরে। ৩৯১ র্যাংক করে নজর কেড়েছেন বাগডোগরার (Bagdogra) মমতানগরের বাসিন্দা গৌতম ঠাকুরি। মেধাতালিকায় ৪৯৪ নম্বর জায়গায় রয়েছেন এমএম তরাইয়ের অজয় মোক্তান। কৃষক পরিবারের ছেলে অজয় তরুণদের কাছে যেন আজ আইকন।
পাহাড় ও তরাইয়ের তিন কৃতীই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী ইউপিএসসি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বসেছিলেন। যার মধ্যে থেকে মেইনস পরীক্ষার জন্য ১৪ হাজার ৬২৪ জন যোগ্যতা অর্জন করেন। তারপর হয় পার্সোনালিটি টেস্ট। মঙ্গলবার পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল বের হবে, তা আগেই জেনে গিয়েছিলেন তিনজন।
সকাল থেকে স্নায়ুচাপ বাড়ছিল দার্জিলিংয়ের লরেটো কনভেন্টের প্রাক্তনী জয়শ্রীর। আইন নিয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছিলেন। তবে ইউপিএসসির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দার্জিলিংয়ে ফিরে আসেন। কোথাও কোচিং না নিয়ে ইন্টারনেটের সাহায্য ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষজ্ঞদের দেখানো পথেই সাফল্য এসেছে বলে জানালেন তিনি। সিভিল সার্ভিসে দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টাতে সফল হলেন। এদিন বাবা জোসেফের সঙ্গে বসে জয়শ্রী ইন্টারনেটে নিজের ফল দেখেছেন। জোসেফ দার্জিলিং মিউনিসিপ্যালিটিতে কর্মরত। মেয়ের ফলাফলে তিনি উচ্ছ্বসিত। জোসেফ বললেন, ‘ওর স্বপ্নপূরণে সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। আজ আমি সবচেয়ে খুশি।’
একের পর এক শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়ে ফোন আসতে থাকে। জয়শ্রীর কথায়, ‘আইনের ছাত্র হওয়ায় সিলিভ সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছিল। ঠাকুরদা একজন শ্রম আধিকারিক ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হই। তঁার স্বপ্নকে সফল করতে পেরে ভালো লাগছে। ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। তবে ক্যাডার অ্যালোকেশন না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’
বাগডোগরার গৌতম ঠাকুরি ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন। বাবা কৃষ্ণাবাহাদুর ঠাকুরি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। গৌতমের পড়াশোনা বেঙ্গালুরুর রাষ্ট্রীয় মিলিটারি স্কুলে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। বর্তমানে তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে গবেষণা করছেন। দিল্লিতে বসেই এদিন বললেন, ‘২০২১ সাল থেকে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। বাবার পেনশনের টাকাতেই সংসার চলছিল। কিছুদিন পর বাড়ি ফিরব।’ ছেলের সাফল্যে খুশি গৌতমের মা সীতা ঠাকুরি। তিনি বর্তমানে বাগডোগরায় রয়েছেন।
অন্যদিকে, ৪৯৪ র্যাংক করা অজয় মোক্তান ৭ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তবে প্রত্যেকে আজ প্রতিষ্ঠিত। কেউ সেনাবাহিনীতে, কেউ আবার পুলিশে কর্মরত। অজয়ের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের বেথল স্কুলে। পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত পানিঘাটা রেইনবো হাইস্কুলে পড়াশোনা। পরবর্তীতে ডঃ আইবি থাপা হাইস্কুলে ভর্তি হন। স্নাতক হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অজয় বলছিলেন, ‘ইউপিএসসিতে এটা পঞ্চম প্রচেষ্টা। এজন্য আমাকে দিল্লিতে কোচিং নিতে হয়েছে। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি।’
অজয়ের বাবা সিংবাহাদুর মোক্তান কৃষক। অজয়ের ফলাফল নিয়ে খুশি সিংবাহাদুর। অজয়ের দাদা নিমা মোক্তান বললেন, ‘আমার বাবার বয়স এখন ৭২ বছর। আগে কৃষিকাজ করতেন। এখন আর শরীর সায় দেয় না। মা সুকু ডোলমা মারা গিয়েছেন। ভাইয়ের খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই সবাই অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন।’
জেলার তিন কৃতীকে দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট, জিটিএ চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপা অভিনন্দন জানিয়েছেন।