দীপ্তিমান মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : জমি কেলেঙ্কারিতে শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকার এক তৃণমূল নেতা এখন তদন্তকারীদের নজরে। শিলিগুড়ি শহরের মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার অংশে এবং শহর লাগোয়া জলপাইগুড়ির গ্রামাঞ্চলে বেআইনিভাবে জমির চরিত্র বদল ও জমির কারবারে তাঁর প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে বলে অ্যান্টি করাপশন সেলের অফিসাররা প্রমাণ পেয়েছেন।
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) এলাকায় গত কয়েক বছরে অন্তত সাড়ে তিন হাজার একর জমির চরিত্র বদলের পরিসংখ্যান এখন তদন্তকারীদের হাতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে গজলডোবাকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করিয়েছেন, সেখানে গত কয়েক বছরে জমির চরিত্র বদলের হিসেব দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্তারাও। ওই কারবারে উল্লিখিত নেতার যোগ পেয়েছেন তাঁরা।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা এলাকায় প্রচণ্ড দাপট শাসকদলের ওই নেতার। তিনি প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিও বটে। যে রিপোর্ট ভূমি সংস্কার দপ্তরের কর্তারা নবান্নে পেশ করতে চলেছেন, তাতে ওই দাপুটে নেতার নাম থাকবে। ওই দপ্তর সূত্রে খবর, বিভিন্ন সময় জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকে কর্মরত কিছু সরকারি আধিকারিকের নামও উঠে আসছে তদন্তে। এঁদের যোগসাজশে শিলিগুড়ির সেবক রোডের দু’পাশে একের পর এক জমির চরিত্র পালটে সেখানে বহুতল ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছে।
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে জমি নিয়ে প্রচুর অনিয়ম হয়েছে বলে মানছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। দুজনেরই দাবি, তাঁরাই প্রথম এই দুর্নীতি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছিলেন। গৌতমের বক্তব্য, ‘জমি নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর পর বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। আমার নজরে য়ে জমি দুর্নীতিগুলি এসেছিল, তা আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম।’
সৌরভ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে জমিতে মাফিয়ারাজের খবর আমিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। তারপরই নবান্নের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা চাই, এই দুর্নীতির গভীরে যাওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে বলেই এই দুর্নীতি সামনে এসেছে।’ ভূমি সংস্কার দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝারি মাপের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে শিলিগুড়ির কাছে ফরেস্ট ল্যান্ডের চরিত্রও বদলে দিয়েছেন। অথচ ওই জমি বিক্রি নিষিদ্ধ।
বিধানসভার বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘শুধু সরকারি অফিসারদের বলির পাঁঠা করে লাভ নেই। এর পিছনে বড় মাথাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?’ সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘তৃণমূলের কয়েকজন নেতা কীভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছেন, তা দেখলে বোঝা যায় দুর্নীতির শিকড় কোথায়। ফুলবাড়ি এলাকায় এক নেতার বাড়ি ও আসবাবপত্র দেখলে য়ে কেউ চমকে যাবেন। তাঁর এই বিপুল আয়ের উৎস কী?’
প্রাক্তন ওই জনপ্রতিনিধি শুধু জমির কারবার করে প্রচুর টাকার সম্পত্তি করেছেন বলে জানতে পেরেছেন অ্যান্টি করাপশন সেলের কর্তারা। তাঁদের তদন্তে জানা গিয়েছে, গজলডোবা এলাকায় প্রচুর জমির বেআইনিভাবে চরিত্র বদল করে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিলিগুড়ি মহকুমার পাথরঘাটা, মাটিগাড়া-১, ফুলবাড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে জমির চরিত্র বদল করা হয়েছে। তবে সেখানে বিক্রি এখনও শুরু হয়নি।
গত পাঁচ-সাত বছরে এই কারবার আড়েবহরে বেড়েছে বলে তদন্তে স্পষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগে তিনি শিলিগুড়িতে এক প্রশাসনিক সভায় সতর্ক করে দিলেও য়েভাবে জমির চরিত্র বদলের কারবার চলছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট বিরক্ত বলে নিজেই মন্ত্রীসভার সর্বশেষ বৈঠকে জানিয়েছিলেন। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়ার পর তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।