বর্ধমান: চৈতন্যদেব থেকে শুরু করে সারদা মা, রানি রাসমণি বা মাদার টেরেজার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা চলছেই। আর এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের তারিফ করতে গিয়ে শতাব্দী প্রাচীন বর্ধমানের ‘কার্জন গেট’ তৈরির ইতিহাসটাই বদলে দিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ (Saayoni Ghosh)। বুধবার বর্ধমানের কার্জনগেট চত্বরে দলের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়ে সায়নী বলেন, ‘বর্ধমানের কার্জন গেট সহ ঝাঁ চকচকে রাস্তার আলো ও হাসপাতাল সবই তৈরি হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের ১২ বছরের শাসনকালে।‘ যা শুনে কার্যত স্তম্ভিত বর্ধমানবাসী। আর এ নিয়ে সায়নীকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
বর্ধমানের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কার্জন গেট। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, বিজয়চাঁদ মহাতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে তদানিন্তন বর্ধমানের মহারাজা ১৯০৩ সালে জিটি রোড এবং বিসি রোডের সংযোগস্থলে এই বিশাল তোরণটি তৈরি করেছিলেন। ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় তোরণটি হয় বলে তার কার্জন গেট (Burdwan Curzon Gate) নামকরণ হয়।
১৯০৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল, ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও বড়লাট মার্কুইস জর্জ ন্যাথানিয়ল কার্জন এই গেট উদ্বোধন করেন। বানানোর পরে, এই তোরণের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘স্টার গেট অফ ইন্ডিয়া’। নির্মাণ কাজ চলেছিল প্রায় এক বছর ধরে। পুরোটাই, বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাবের উদ্যোগে। ১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই তোরণের নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় এবং পুরো কাজ শেষ হয় ১৯০৪ সালের মার্চ মাসে।
তোরণ বানানোর দায়িত্বে ছিল ‘ম্যাকিনটশ বার্ন’ কোম্পানির উপরে। বার্ন কোম্পানিতে সেই সময় বহু বিদেশি স্থপতি, প্রযুক্তিবিদ যুক্ত ছিলেন। যারা সম্পূর্ণ ডিজাইন ও পরিকল্পনা করেন। ১০০ ফুট বাই ১০০ ফুট ব্যাসের প্রায় ৩০ ফুট গভীর খাদের মাটি খোঁড়ার পর মাটির ভিতর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়। সেই ভিতের নীচে বালি, পাথর দিয়ে শক্ত গাঁথুনি গাঁথা হয়। সেই গাঁথুনি ধীরে ধীরে তোলা হয় মাটির ভিতর। প্ল্যাটফর্মের মত ধাপে ধাপে ওঠে তোরণ।
বিরোধীদের দাবি, ’কার্জন গেটের’ এসব ইতিহাস সম্বন্ধে কিছুই জানেন না সায়নী ঘোষ। সায়নীকে উদ্দেশ্য করে সিপিএম ,কংগ্রেস ও বিজেপির কটাক্ষ, ইতিহাস জেনে তারপর ওনার কার্জন গেটের সামনে তৈরি হওয়া মঞ্চে ওঠা উচিত ছিল। কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন, ‘তৃণমূলের নেতা নেত্রীরা তৃণমূল সুপ্রিমোর চাটুকারিতার শেষ পর্যায় চলে গেছেন বলেই ঐতিহাসিক তোরণ নিয়ে এমন উদ্ভট মন্তব্য শোনা যাচ্ছে।‘ বিজেপি নেতা পুষ্পজিৎ সাঁই বলেন, ‘যাঁর রাজনৈতিক শিক্ষা কম, তিনি তো এরকম মন্তব্য করবেনই।‘