মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: লোকসভা ভোটের (Loksabha election) আগে সংগঠন ঢেলে সাজাতে গিয়ে কি উলটে চাপে পড়ল আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল (TMC)? বাকি ব্লকে খুব একটা গণ্ডগোল না হলেও, আলিপুরদুয়ার-১ (Alipurduar) ব্লকে অঞ্চল পদাধিকারী রদবদল নিয়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের একাংশ ব্যাপক ক্ষুব্ধ। তাঁরা প্রয়োজনে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে শাসকদলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসায় দলের জেলা নেতৃত্বেরও অস্বস্তি বাড়তে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
আলিপুরদুয়ার শহরতলির বিবেকানন্দ-১, বিবেকানন্দ-২, ও জংশন এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, দলের পুরোনোদের সরিয়ে দিয়ে সিপিএম (CPM), বিজেপি (BJP) থেকে আসা নেতাদেরই নাকি এখন এলাকায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুব্ধ ওই নেতারা এহেন পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটের আগে দলত্যাগের সিদ্ধান্ত অবশ্য নেননি। দলে থেকেই দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নামারও হুমকি দিয়েছেন।
বুধবার বিবেকানন্দ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদ্য ছাঁটাই হওয়া অঞ্চল চেয়ারম্যান তাপস দে সরকার সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘আমি ১৯৯৮ সাল থেকে দল করে আসছি। আমাকে ও আরও অনেক পুরোনো নেতাকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। যারা দলের ক্ষতি করছে, তাদের অনেককেই দলের জেলা নেতৃত্ব আগলে রাখছে। হয়তো রাজ্য নেতৃত্ব এসব ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারেই থাকছে।’ তাপসের কথায়, ‘দলে ছেড়ে অন্য দলে যাব না। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভবিষ্যতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে পারি।’ যুব নেতা রূপম দেবানাথ, সুব্রত নন্দীদেরও একই অভিযোগ, দলে পুরোনোরা মর্যাদা পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক সাংগঠনিক পদে রদবদল করা হয়েছে। পুরোনোদের সরিয়ে নতুনদের অনেক অঞ্চলেই অঞ্চল সভাপতি ও অঞ্চল চেয়ারম্যান হিসেবে দলীয় সাংগঠনিক রদবদল করা হয়েছে। লোকসভা ভোটের মুখে ওই সাংগঠনিক রদবদল এখন জেলা নেতৃত্বের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও দলের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিকবড়াইক বলেন, ‘যাঁরা অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন, সেই দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে, পরবর্তীতে তাঁদের ব্লক কমিটিতে নিয়ে আসা হবে।’ আর তাঁর পরামর্শ, ‘কোনও নেতার বক্তব্য থাকতেই পারে। তাঁরা এসে আমাকে জানাতে পারেন। কারও উসকানিতে কেউ দলবিরোধী কাজ করলে দলও তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
২০১৯ সালে আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনটি বিজেপির দখলে গিয়েছিল। শাসকদল ওই আসনটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে এবারে মরিয়া। কিন্তু লোকসভা ভোট দোড়গোড়ায় এলেও শাসকদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ মাথাচাড়া দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট ম্যানেজারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।