সানি সরকার, শিলিগুড়ি: কিছুটা দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া বালাসন স্পষ্ট দেখা যায়। তাতে পরিষ্কার এলাকাটি একসময় ছিল নদীর চর। এমনই এক জমিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তিনতলা বেসরকারি একটি স্কুল। স্কুলটি তৈরি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রতাপ বর্মন। তিনি আবার মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা পম্পা বর্মনের স্বামী। ফলে শাসকদল এবং স্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে তিনি এমন বেআইনি নির্মাণ তৈরির সাহস দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ। কৃষিকাজের জন্য নির্দিষ্ট পাট্টার জমিতে বেসরকারি স্কুল, তাও আবার তিনতলা ভবন- এমন বেআইনি কাজের জন্য দলের বদনাম হচ্ছে বলে মনে করছেন মাটিগাড়া ব্লকের আঠারোখাই অঞ্চলের তৃণমূলের একটা বড় অংশ। তবে নিজের মতো করে যুক্তি সাজিয়েছেন প্রতাপ। মাটিগাড়ার বিডিও বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘কৃষিকাজের জন্য নির্দিষ্ট করা জমিতে কখনোই বাণিজ্যিক ভবন করা যায় না। বিএলআরওকে গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলা হবে। প্রয়োজনে তা জানানো হবে উপরমহলে।’
চা বাগানের জমিতে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান অলোক চক্রবর্তীর রিসর্ট তৈরিকে কেন্দ্র করে কম হইচই হয়নি। যদিও এখনও পর্যন্ত ওই বেআইনি নির্মাণটি ভাঙার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। এই বিতর্কের মাঝেই শিবমন্দির-আঠারোখাইয়ের রঙ্গিয়ার বালাসন কলোনিতে তৈরি হয়েছে তৃণমূল নেতা প্রতাপ বর্মনের তিনতলা বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে কৃষিকাজের জন্য কয়েক বছর আগে পাট্টা বিতরণ করা হয়। ওই পাট্টা যে হস্তান্তরযোগ্য নয়, তার যেমন উল্লেখ রয়েছে, তেমনই জমিটি শুধুমাত্র কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হবে, তা পাট্টায় পরিষ্কার করে বলা রয়েছে। অভিযোগ, নিজে শাসকদল করার পাশাপাশি স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হওয়ার প্রভাব খাটিয়েছেন তিনি। প্রতাপ অভিযোগ মানতে না চাইলেও পাট্টা যে কৃষিজমির, তা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘এলাকায় অনেকেই বাড়িঘর তৈরি করেছেন। স্কুল ভবন তৈরির মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই।’ পম্পা বলছেন, ‘উনি তো ২০০৬ সাল থেকে স্কুল চালাচ্ছেন।’
শাসকদলের এক নেতার কথায়, ‘এত বড় একটা নির্মাণ হল, প্রশাসনের নজরে পড়ল না?’ তবে প্রতাপের পাশে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অভিজিৎ পাল বলেন, ‘শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য স্কুল ভবন তৈরি হয়েছে।’