বক্সিরহাট: ফলিমারি গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র সেতু দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রইলেও সেই সেতু সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় নেতা অথবা জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ, উলটে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির নির্দেশে দুর্বল সেতু দিয়ে কয়েক টন ওজনের পকলিন যন্ত্রাংশ পার করার ফলে সেতুর একাংশে ফাটল ধরেছে। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। ওই তৃণমূল নেতার শাস্তির দাবি সহ সেতু সংস্কারের দাবিতে শনিবার সকাল থেকেই টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধে শামিল হয়েছেন গ্রামবাসীরা। বিক্ষোভকারীদের বোঝানো তো দূরের কথা উলটে লোক পাঠিয়ে ঘুষ দিতে চেয়েছেন ওই তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। তাতে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও ছড়িয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে ওই নেতার এহেন কীর্তিতে বিপাকে পড়েছে শাসকদল।
তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের সঙ্গে জারিগঙ্গাধর নদী পেরিয়ে পৌঁছোতে হয় ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে। দীর্ঘ আন্দোলনের পরে ২০১০ সালে জারি গঙ্গাধর নদীর ওপর সেতু তৈরি হয়। তবে বর্তমানে সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে ওই সেতুটি। অভিযোগ, সম্প্রতি ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওপর তেলের পাইপলাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সেই কাজের জন্য স্থানীয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি গোকুল সাহার নির্দেশে শুক্রবার সন্ধ্যায় কয়েক টন ওজনের একটি পকলিন যন্ত্রাংশ ওই সেতু দিয়ে পার হয়। ভারী যন্ত্রাংশ সেতু দিয়ে পার হওয়ার ফলে ফাটল ধরেছে ওই সেতুর একাংশে। সেই সঙ্গে অনেকখানি হেলে পড়েছে সেতুটি। এই নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। সেতু পার করার পর পকলিনটি আটকে রাখে গ্রামবাসীরা। তাঁদের বোঝানো তো দূরের কথা, উলটে ওই পকলিন যন্ত্রাংশ ছেড়ে দেওয়ার জন্য লোক পাঠিয়ে গ্রামবাসীদের ৫০০০ টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন ওই তৃণমূল নেতা। তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। এদিন সেতু সংস্কারের দাবি সহ ওই তৃণমূল নেতার শাস্তির দাবিতে রামপুর-ফলিমারি সংযোগকারী রাজ্য সড়কের ওপর বাঁশ বেঁধে, টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধে শামিল হয়েছেন প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী। অবরোধের ফলে ব্যহত হয় যান চলাচল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় বক্সিরহাট থানার জোড়াই ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশের সঙ্গেও বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরে তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের বিডিও ডালকি লামার আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
এক বিক্ষোভকারী দিলীপ দাস বলেন, ‘সংস্কারের অভাবে সেতুটি ভগ্নাদশায় থাকলেও কেউ তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। অথচ স্থানীয় অঞ্চল সভাপতির নির্দেশে ভারী পকলিন পার করতে গিয়ে সেতুটি ফাটল ধরেছে। উলটে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিতে চাওয়া হয়েছিল।‘
তুফানগঞ্জ-২ বিডিও ডালকি লামা বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সেতুটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সেই রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। আপাতত সেই সেতু দিয়ে যাতে ভারী যান চলাচল না করে সেই বিষয়টি পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে।‘ অন্যদিকে, যদিও গ্রামবাসীদের তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ফলিমারি তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সভাপতি গোকুল সাহা। তাঁর কথায়, গ্রামবাসীদের আড়ালে কিছু বিজেপি তাঁকে কালিমালিপ্ত করার জন্য এ সমস্ত ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে।
তৃণমূল নেতার এহেন কীর্তিতে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। এ ব্যাপারে বিজেপির তুফানগঞ্জ বিধানসভার কনভেনার বিমল পাল বলেন, ‘সেতুটি ভেঙে পড়লে কয়েক লক্ষ মানুষ বিপদে পড়বেন। অথচ কাটমানির বিনিময়ে মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমকে বিপদের মুখে দাঁড় করিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।’