সামসী: মাধ্যমিকে লেটার নম্বর নিয়ে পাস করেছে দুই যমজ ভাই মহম্মদ মিনহাজুল ইসলাম ও মহম্মদ রিয়াজুল ইসলাম। কিন্তু আর্থিক অভাবে তাদের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তায় পরিবার। এবছর মাদ্রাসা মাধ্যমিকে(হাই মাদ্রাসা) নজরকাড়া ফল করেছে দুই যমজ ভাই। একে অপরের মধ্যে জন্মের সময়ের ব্যবধান ছিল ৩ মিনিট। আর জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরেও খুব বেশি ব্যবধান হল না যমজ ভাইয়ের। ৮০০ নমরের মধ্যে ৭০২(৮৮ শতাংশ) নম্বর পেয়ে মাদ্রাসা টপার হয়েছে মহম্মদ মিনহাজুল ইসলাম। আর তার থেকে ৩ নম্বর কম পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে তার ভাই মহম্মদ রিয়াজুল ইসলাম। দু’জনেই রাজারামচক হাই মাদ্রাসার ছাত্র। রিয়াজের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৯(৮৭ শতাংশ)। তাদের এই সাফল্যে পরিবার পরিজনদের পাশাপাশি খুশি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও।
দুই যমজ ভাইয়ের বাড়ি রতুয়া-১ ব্লকের ভাদো অঞ্চলের বোলদিয়াপুকুর গ্রামে। বাবা সফিকুল ইসলাম গ্রাম্য চিকিৎসক। মা সাহনারা খাতুন গৃহবধূ। চার ছেলে নিয়ে মোট ছয় জনের পরিবার। এই পেশা থেকেই যা রোজগার হয় তা দিয়ে ছেলেদের উচ্চশিক্ষিত করে দেশ ও সমাজের কাজে লাগাতে চান সফিকুলবাবু। দুই যমজ ভাই রাজারামচক হাই মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিলেও ওরা দুজন মহাকালবনা মর্ডান মিশন নামের একটি আবাসিক স্কুলের ছাত্র। অষ্টম শ্রেণি থেকেই তারা এখানে পড়াশুনা করে। তাদের বাবা সফিকুল ইসলাম সামান্য একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। সারাদিনে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসা করে খুব সামান্যই আয় হয়। জমি জায়গা তেমন নেই বললেই চলে। এরই মধ্যে ছেলেদের পড়াশুনার খরচ গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো। একাদশে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশে ভর্তি করেছে কালিয়াচকের একটি বেসরকারি মিশনে। কিন্তু তাদের পড়াশুনার খরচ টানবে কিভাবে এনিয়ে চরম চিন্তায় রয়েছেন যমজ ভাইয়ের পরিবার।
সফিকুলবাবু জানান, সামান্য আয়ে সব বিষয়ে আলাদা আলাদা গৃহশিক্ষক রেখে ছেলেদের পড়ানো আমার পক্ষে মুশকিল হতো। তাই স্বল্প খরচে তিন বছর আগে মহাকালবনা মর্ডান মিশনে দুজনকেই ভর্তি করি অষ্টম শ্রেণিতে। জন্ম থেকেই তাদের উঠা বসা পড়াশোনা একসঙ্গেই। তাদের সাফল্য পরিবারের লোকজন সকলেই খুশি। তবে পরিবারে অর্থাভাব থাকায় তাদের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চরম চিন্তায় রয়েছেন গোটা পরিবার।
মিনহাজুল ও রিয়াজুল জানায়, ছোটবেলা থেকেই তাদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরে কোনওদিনই খুব বেশি ফারাক থাকত না। আবাসিক স্কুলে পড়াশোনা করার কারণে হস্টেলেই কাটে তাদের ছাত্রজীবন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ধরে পড়াশোনা কোনওদিনই তারা করেনি। দিনে ৪-৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করতো। দুজনেরই স্বপ্ন ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দশের সেবা করা।
রাজারামচক হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আশরাফুল বিশ্বাস দুই যমজ ভাইয়ের সাফল্য কামনা করেছেন। তাদের পড়াশুনার জন্য সবরকম ভাবে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।