শিলিগুড়ি: ২০০৯ সাল থেকে পরবর্তী তিনটি লোকসভা ভোটে পাহাড় ও সমতলের একটা বড় অংশে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংদের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে দার্জিলিং আসনে এখনও একপ্রকার গুরুত্বহীন হয়েই রয়েছেন বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। তাঁর একসময়ের বিশ্বস্ত দুই সঙ্গীর মধ্যে বিনয় তামাং এখন পাহাড়ে কংগ্রেসের ‘হাত’ মজবুত করার লক্ষ্যে নেমেছেন। অন্যদিকে, অনীত থাপা ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা স্থাপন করে তার সুপ্রিমো হয়ে রয়েছেন। পাহাড়-ডুয়ার্সে বিমল গুরুংয়ের মোর্চা এখন খণ্ড খণ্ড হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ পাহাড়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন একসময়ের পাহাড়ের অবিসংবাদিত রাজা। কোথায় এখন বিমল গুরুং?
২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়াতে পাহাড়ের বাইরে পালিয়ে ছিলেন বিমল গুরুং। পরবর্তীতে ২০২০ সালের অক্টোবরে ফের পাহাড়ে ফিরে এলেও ততদিনে তাঁর হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে পাহাড়ের রাশ। তবু পাহাড়ে থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে ফের আগের জায়গায় নিয়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিমল এখন পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ছোট ছোট সভা করে বলছেন, ‘অনীতরা পাহাড়ের জাতিসত্তাকে বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু আমি তা পারব না।’ পাশাপাশি পাহাড়ে ফের গোর্খাল্যান্ডের সুড়সুড়ি দেওয়ার কাজও চলছে সমানতালে।
২০০৭ সালে পাহাড়ে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড(Gorkhaland) স্থাপনের আশ্বাস দিয়ে বিমল গুরুং তৈরি করেছিলেন তাঁর নতুন দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বাম আমলে ও ২০১১ সালের পর তৃণমূল কংগ্রেসের আমলে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিমল-বিনয়রা। বিমল গুরুংই ছিলেন জিটিএ’র প্রথম চিফ এগজিকিউটিভ। একসময় গোটা পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সের কিছুটা অংশে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বিমলের। ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মূলত বিমল গুরুংদের কাঁধে ভর করেই দার্জিলিং লোকসভা আসনটি দখল করে বিজেপি। তবে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়ে বিমলদের দাপট ধীরে ধীরে কমতে থাকে। মাঝেমধ্যেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা পাহাড় এখন পুরোপুরি শান্ত।
বিনয় তামাংকে এবার প্রার্থী করার কথা ভাবছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শংকর মালাকার বলেন, ‘আমরা যে সম্ভাব্য প্রার্থীতালিকা এআইসিসির কাছে পাঠিয়েছি, সেখানে বিনয়ের নামও আছে। বাকিটা সময়ই বলবে।’ বর্তমানে জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ অনীত থাপা তাঁর প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা ও তৃণমূলের যৌথ প্রার্থী গোপাল লামার সমর্থনেই প্রচার শুরু করেছেন।
তাহলে এবার লোকসভা ভোটে কী ভূমিকা থাকছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার? মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, ‘লোকসভা ভোট নিয়ে আমাদের এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।’