চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার : অনেক বিতর্ক, অনেক জল্পনার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি-গুয়াহাটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার থেকে ট্রেনটি বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করবে। উত্তরবঙ্গ থেকে দ্বিতীয় বন্দে ভারত চালুর কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে গলা ফাটাতে ব্যস্ত বিজেপি নেতারা। কিন্তু বন্দে ভারত চালু হলে, আদৌ কি লাভবান হবেন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা? ব্যবসা সহ অন্য কাজে যাঁরা নিয়মিত কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার বা নিম্ন অসম থেকে গুয়াহাটিতে যাতায়াত করেন, তাঁরা অবশ্য এই ট্রেন নিয়ে তেমন উচ্ছ্বসিত নন। তাঁদের মতে, বন্দে ভারতের সময়সূচি ও ভাড়া যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে নিয়মিত যাতায়াতাকারীদের আদৌ কোনও লাভ হবে না। কারণ নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটির মধ্যে দিনভর ট্রেন রয়েছে। সময় বন্দে ভারতের তুলনায় ঘণ্টাদুয়েক বেশি লাগলেও ভাড়া অনেকগুণ কম। বরং কোচবিহার বা আলিপুরদুয়ার থেকে কলকাতাগামী বন্দে ভারত চালু করা হলে, বেশি লাভ হত বলে মনে করছেন অনেকেই।
দিনহাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামীর বক্তব্য, বন্দে ভারতে বেলা ১২টায় গুয়াহাটি পৌঁছে কোনও লাভ হবে না। তখন মেঘালয় বা অরুণাচলপ্রদেশের মতো রাজ্যে যেতে হলে সমস্যা হয়। তাই আগের দিন রাতে বা সকালে গুয়াহাটি যাওয়ার ট্রেন ধরাই সুবিধাজনক। বন্দে ভারতে ব্যবসায়ীদের কোনও লাভ হবে না। শখে কেউ একদিন চড়তে পারে।
ভোর থেকে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে অসম যাওয়ার একের পর ট্রেন পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে অনেকেই সরাইঘাট এক্সপ্রেসকে পছন্দ করেন। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র মেল, কামরূপ এক্সপ্রেস, নর্থইস্ট এক্সপ্রেস সহ দিনের বেলা আরও কয়েকটি ট্রেন রয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যার পর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, অবধ-অসম এক্সপ্রেস রয়েছে। এছাড়া রাজধানী এক্সপ্রেস, রাজ্যরানি, বিবেক, হামসফর এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনও দুটি স্টেশনের মধ্যে চলাচল করে। এছাড়া ডিব্রুগড়-কন্যাকুমারী, বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি, তিরুবনন্তপুরম-গুয়াহাটি, ওখা এক্সপ্রেসের মতো বহু সাপ্তাহিক ট্রেনও চলে। রেলের হিসেবে, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি বা কামাখ্যার মধ্যে গড়ে ২২ থেকে ২৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি যেতে এই ট্রেনগুলির সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। স্লিপারে ভাড়া পড়ে তিনশো থেকে চারশো টাকা। এসি-থ্রি টিয়ারে গড়ে আটশো টাকা আর এসি টু-টিয়ারে ১১০০ টাকার মতো। নিউ কোচবিহার থেকে স্লিপারে গুয়াহাটি যেতে খরচ হয় আড়াইশো টাকা মতো, থ্রি-টিয়ারে সাড়ে ছয়শো টাকার কাছাকাছি আর টু-টিয়ারে খরচ পড়ে ৯০০ টাকার মতো।
সেখানে বন্দে ভারতে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি যেতে সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। কিন্তু সাধারণ চেয়ার কারে কেটারিং চার্জ ছাড়া ভাড়া পড়ছে ৯১৮ টাকা। আর এগজিকিউটিভ ক্লাসে কেটারিং চার্জ ছাড়া ভাড়া পড়ছে ১৮৩৫ টাকা। একইভাবে নিউ কোচবিহার থেকে চেয়ার কারে ভাড়া ৭২৩ টাকা। এগজিকিউটিভ ক্লাসে ভাড়া ১৪৪৫ টাকা। টিকিট কাটার সময় খাবার বেছে নিলে এই ভাড়া যথাক্রমে ১৫৭ টাকা ও ১৯০ টাকা বেশি পড়বে। এত টাকা খরচ করে গুয়াহাটি যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এছাড়া বন্দে ভারত গুয়াহাটি গিয়ে পৌঁছাবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। এত বেলায় পৌঁছে কাজ করা সমস্যা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
টেলিকম ব্যবসায়ী তথা হেরিটেজ টুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অপু দে বলছেন, বন্দে ভারত প্রিমিয়াম রেঞ্জের ট্রেন। বড় মাপের ব্যবসায়ীরা যাঁরা উত্তর-পূর্ব ভারতে ঘুরতে যান বা যাঁরা বড় ব্যবসা করেন তাঁদের কাছে এটা ভালো। সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য নিউ কোচবিহার থেকে কলকাতাগামী বন্দে ভারত চালু হলে ভালো হবে।
আলিপুরদুয়ার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিত্ দে বলছেন, অনেক ব্যবসায়ী তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে চান, বন্দে ভারতে তাঁদের ভালো হবে। তবে নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে কলকাতাগামী বন্দে ভারত চালুর দাবি রয়েছে। সেটা নিয়ে রেলের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে।