শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : ভারতীয় সেনার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার কাজ শুরু করছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সেনার উদ্যোগেই গবেষণা শুরু হচ্ছে। এই প্রথম উত্তরবঙ্গের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণার কাজ শুরু করছে সেনা।
সেনার শীর্ষমহল থেকে যৌথ গবেষণার জন্য ইতিমধ্যেই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসমিতিও গবেষণার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। আপাতত ভারতীয় সেনার ৩৩ কর্পস গবেষণার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার কাজ করবে। গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ভারতীয় সেনার যৌথ উদ্যোগে এনবিইউ রিসার্চ সেন্টার অন ডিপ্লোম্যাসি অ্যান্ড ওয়ার নামে একটি পৃথক কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। কেন্দ্রের ডিরেক্টর করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌমিত্র দে-কে।
৩৩ কর্পসের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক কর্নেল তীর্থঙ্কর চক্রবর্তী সেনার তরফে গবেষণার বিষয়টি তদারকি করবেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সেই কাজ করবে চার অধ্যাপকের একটি দল। সেন্টার ফর হিমালয়ান স্টাডিজের বিনায়ক সুনদাস ও অদ্বৈত থাপা, ইতিহাসের প্রিয়দর্শিনী ভার্মা এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সৌরদীপ সেন সেই দলে রয়েছেন। সেন্টারের পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ জড়িত থাকায় গবেষণার বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখতে একাধিক পদক্ষেপ করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের বাছাই করা গবেষকরাই যৌথ গবেষণার অংশ হিসাবে কাজ করবেন।
কেন এমন গবেষণা জরুরি? এক সেনাকর্তার ব্যাখ্যা, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকেন নেকের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পদক্ষেপও করেছে সেনা।
তবে সেই নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে পাহাড়, জঙ্গল ও নদী ঘেরা উত্তরবঙ্গ সম্পর্কে আরও বেশি করে তথ্য প্রয়োজন। উত্তরের বনাঞ্চল এবং বন্যপ্রাণীদের প্রকৃতি সম্পর্কে আরও বেশি করে জানাও জরুরি। হিমালয় সম্পর্কেও সেনাবাহিনীতে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। কিন্তু সমস্যা হল, এই অঞ্চলের ইতিহাস, ভূপ্রকৃতি, সমাজ জীবন সম্পর্কে সেভাবে কোনও তথ্য ভাণ্ডার সেনার হাতে নেই। গবেষণা হলে বিষয়গুলি সম্পর্কে আরও বেশি করে জানা যাবে। ওমপ্রকাশের কথায়, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশীদারিত্ব থাকবে। সেনার পরামর্শ অনুসারে তাদের প্রযোজনের নিরিখে গবেষণা পরিচালিত হবে। সেনার ৩৩ কর্পস সিকিমে ভারত-চিন সীমান্ত রক্ষার মুখ্য দায়িত্বে আছে। সেই ৩৩ কর্পসকেই গবেষণার বিষয়ে দাযিত্ব দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেনা সূত্রের খবর, সেন্টার চালু হলে সেনা সদর দপ্তরের শিক্ষা বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আরও কিছু কাজকর্ম করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও শামিল করা হবে। য়দিও সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে এখনই বিস্তারিত কিছু জানাতে চায়নি কোনও পক্ষই।
হিমালয়ের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন সেনা জওয়ানরা। স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক সমস্যার মুখেও পড়তে হয়েছে। জঙ্গলের ভেতরে থাকা বনবস্তি এলাকাতেও কাজে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে সেনাবাহিনীকে। বনবস্তি ও স্থানীয়দের কৃষ্টি সম্পর্কে না জানার জন্যই সেনা ও স্থানীয়দের মধ্যে তিক্ততা তৈরি হচ্ছে। গবেষণালব্ধ তথ্য সেই সমস্যা মেটাতে কাজে লাগবে বলেই আশাবাদী সেনাকর্তারা।