উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হার্দিক পান্ডিয়ার চোটই সাপে বর হয়েছে ভারতের। তাঁর জায়গায় সুযোগ পেয়েই বিশ্বকাপে বাজিমাৎ করেন মহম্মদ সামি। চারটি ম্যাচ মাঠের বাইরে থাকার পর বাকি ৭টা ম্যাচ খেলে ২৩টি উইকেট পায় বাংলার এই পেসার। বিশ্বকাপের পর থেকে আলোচনায় উঠে এসেছেন মহম্মদ সামি। বাংলার এই জোরে বোলারকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই ক্রিকেট বিশ্বে। কলকাতাই সামিকে পথ চিনিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের। তবু সামি আসলে বাংলার নন। আদতে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার বাসিন্দা তিনি। তা-ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার জন্য প্রথম থেকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন বাংলাকে।
উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে বাংলায় কেন এসেছিলেন সামি? গল্পটা বঞ্চনা আর অপমানের। উত্তরপ্রদেশ থেকেই ভারতীয় দলে দাপিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন বা খেলছেন মহম্মদ কাইফ, সুরেশ রায়না, কুলদীপ যাদব, পীযূষ চাওলা, প্রবীণ কুমার, ভুবনেশ্বর কুমার। আর সামিও উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্র হয়েও বাংলার হয়েই ক্রিকেট খেলে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশে ক্রিকেটে হাতেখড়ি ভারতীয় পেসার মহম্মদ সামি। খেলার জন্য বছরের একটা বড় সময় থাকেন কলকাতাতেই। কলকাতার ময়দান, ইডেন গার্ডেন্স সব কিছুই তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা।ছোট বয়সেই উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে খেলার তাগিদে বাংলায় চলে আসেন এই পেসার।
সামি বলেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ট্রায়ালে দু’বছর অংশ নিয়েছিলাম। প্রথম বার শুরুতে সব কিছুই ঠিক থাকত। সব কিছু ভালই মনে হত। কিন্তু ফাইনাল রাউন্ড এলেই উত্তরপ্রেদেশের লোকেরা আমাকে লাথি মেরে বাইরে বার করে দিত। আমাকে বলা হত, ‘এখানে তোমার কোনও প্রয়োজন নেই।’ এর পরের বছর রঞ্জি ট্রফির ট্রায়ালে উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেট কর্মকর্তাদের কাছে চরম অপমানিত হতে হয়েছে বলে জানান সামি।
সামি বলেন, সে রাজ্যে রঞ্জির ট্রায়ালে এসেছিল ১৬০০ ক্রিকেটার। তিন দিনে সবাইকে দেখে রঞ্জি ট্রফির দল তৈরি করার কথা ছিল। সে বার আমার সঙ্গে দাদাও ছিলেন। প্রধান কর্তাদের এক জনের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন দাদা। আমার দাদাকে ওই কর্তা এমন একটি কথা বলেছিলেন, ‘যদি আমার চেয়ার নাড়িয়ে দিতে পারে, তা হলে তোমার ভাই সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। না হলে সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত।’ আমার দাদা তাঁকে জবাবে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই আপনার চেয়ার নাড়াতে তো পারবেই, দরকার হলে আপনার চেয়ার উল্টেও দিতে পারে। ওর গায়ে এতটাই শক্তি আছে। কিন্তু আমি চাই না এ ভাবে ভাই সুযোগ পাক। ও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সুযোগ পেলেই খুশি হব।’ তাতে ওই কর্তা বলেছিলেন, ‘তা হলে তোমার ভাইয়ের জায়গা নেই এখানে। প্রতিভা দিয়ে এখানে কিছু হয় না।’ দাদাও মুখের উপর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তা হলে আমার ভাই কোনও দিন উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলবে না।
এরপর আর উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলার কথা ভুলে বাংলাকেই বেছে নেন সামি। বাংলার হয়ে ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর ইডেনে অসমের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। এ বার বিশ্বকাপে অসাধারণ সাফল্যের পর টনক নড়েছে উত্তরপ্রদেশের। নরেন্দ্র মোদিও ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছেন সামিকে। তাঁর গ্রামে একটা ছোট ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।