কলকাতা: প্রাথমিকে এক ধাক্কায় প্রশিক্ষণহীন ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি গেল। শুক্রবার এই মামলায় বেনজির নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে নিযুক্ত হয়েছিলেন সাড়ে ৪২ হাজার শিক্ষক। এই নিয়োগে ইন্টারভিউতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এমনকি নিয়োগ পরীক্ষায় অ্যাপটিটিউড টেস্টও নেওয়া হয়নি বলে ইন্টারভিউয়াররাই বিচারপতির কাছে সাক্ষ্য দিয়ে জানান। এই ঘটনায় জোর শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্যরাজনীতিতে। নির্দেশ সামনে আসতেই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘অকারণে জেদাজেদি করতে গিয়ে কেউ যেন বলি না হয়ে যায়।’
এদিন কুণাল বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতভাবে হোক এটা তো সবসময় বলে আসছি। যাঁরা যোগ্য তাঁরা চাকরি করবেন। আমাদের দেখে নিতে হবে অকারণে জেদাজেদি করতে গিয়ে যেন কেউ বলি না হয়ে যায়। কোনও আদালত যদি কোনও রায় দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর, তাঁদের আইনজীবীরা খতিয়ে দেখবেন গোটা বিষয়টি। এই মুহূর্তে রায়ের সঙ্গে দলের তরফে কোনও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানানোর অবকাশ নেই।’
পাশাপাশি কুণালের বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়ে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘উনি তৃণমূলের মুখপাত্র বটে কিন্তু, আজ যা বলছেন দু’দিন পরে অন্য কথা বলতে পারেন। টাকার বিনিময়ে এখানে খেলা হয়েছে। আমি আগেও বলেছিলাম অবশ্যই যেন ওয়েবসাইটে স্বচ্ছতার সঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।’
কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘যেভাবে ইচ্ছামতো নিয়োগ করা হয়েছে, টাকার লেনদেন হয়েছে তা খুবই লজ্জার বিষয়। এই সরকারের সমস্ত ডিপার্টমেন্ট আইনের বাইরে কাজ করেছে।’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘এটাকে দুর্নীতির ভূমিকম্প বলা যেতে পারে। জানি না এর শেষ কোথায়।’
প্রসঙ্গত, এদিন ৩৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল হলেও বাকি সাড়ে ৬ হাজার জনের চাকরি বহাল থাকছে। রাজ্যকে তিনমাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তা শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁদের মধ্যে কেউ ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকলে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁরাও অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায়ে জানিয়েছেন, আগামী ৪ মাস চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষকরা স্কুলে যেতে পারবেন। তবে পার্শ্বশিক্ষকের বেতন পাবেন তাঁরা।
ন’বছর আগের টেটের নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে আদালতে মামলা করেছিলেন নিয়োগ না পেয়ে অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রাথী প্রিয়াংকা নস্কর-সহ আরও ১৪০ জন। তাঁদের হয়ে মামলা করেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি দাবি করেছিলেন, এই প্যানেলের সাড়ে ৪২ হাজার জনের নিয়োগ হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে মেধার ভিত্তিতে সঠিকভাবেই চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু বাকিদের চাকরি নিয়ে তদন্তের দাবি জানান তিনি।
মামলাকারীরা আদালতে জানিয়েছিলেন, সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে তাঁদের থেকে কম নম্বর পেয়েও অনেক অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী চাকরির সুপারিশপত্র পেয়েছেন। এই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর আগে এই মামলার শুনানিতেই হাইকোর্টে ডেকে আনা হয়েছিল মানিক ভট্টাচার্যকে। সেদিন আলাদা করে মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন বিচারপতি।