তপন বকসি, মুম্বই: বিশ্বজুড়ে ‘জওয়ান’ ছবির মুক্তির সাতদিন পর মুম্বইয়ে যশরাজ ফিল্ম স্টুডিওর ফ্লোরে অনুরাগী এবং সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন শাহরুখ। এদিনের সম্মেলনে শাহরুখ খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজয় সেতুপতি, দীপিকা পাড়ুকোন, সুনীল গ্রোভার, সানিয়া মালহোত্রা, লেহের খান ও পরিচালক অ্যাটলি কুমার।
সম্মেলনে শাহরুখ বলেন, ‘কোভিডের সময় যখন আমি বাড়িতে ছিলাম তখন আমার বড় ছেলে আরিয়ান একদিন আমাকে বলল, বাবা আমি আর সুহানা বড় হওয়ার সময় তোমার স্টারডমকে দেখেছি। সেইসময় তোমার ছবিগুলো খুব বড় সাফল্যও পাচ্ছিল। আমার মেয়ে সুহানাও একই কথা বলছিল আমাকে। সুহানা বলল, বাবা আমরা তোমার স্টারডমকে দেখেছি। কিন্তু আমাদের ছোট ভাই আব্রাম ওর বড় হওয়ার সময় ওর চারপাশে তোমার সেই সুপারস্টারডমের পরিবেশকে এখনও পর্যন্ত পায়নি। সুতরাং আগামী পাঁচটা ছবিতে তোমাকে খুব হার্ডওয়ার্ক করে সুপার স্টারডমকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। যাতে আব্রাম তোমার সেই স্টারডমকে নিজের চোখে দেখতে পারে এবং বুঝতে পারে। মাশাআল্লাহ, ভগবান আমার প্রতি সদয় হয়েছেন। পাঠান-এর বেলায় হয়েছেন, জওয়ান-এর বেলায় আরও একটু বেশি হলেন।‘
এরপর শাহরুখ আরও বলেন, ‘এবছরের প্রথম দিকে ২৬ জানুয়ারি পাঠান যখন রিলিজ হয় সেটি ছিল প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো একটি শুভ দিন। এরপর ৭ সেপ্টেম্বর জওয়ান রিলিজ হল জন্মাষ্টমীর মতো এক পূণ্য দিনে। যা কি না ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন। আরেকটি অদ্ভুত বিষয়, রাজকুমার হিরানির সঙ্গে আমার আগামী ছবি ডাংকি রিলিজ হচ্ছে ক্রিসমাসে।‘
মুম্বইয়ের আন্ধেরির যশরাজ ফিল্ম স্টুডিওর ফ্লোরে আসার আগে শাহরুখ খানের সচিব পূজা দাদলানি তার ইনস্টাগ্রামে সাদা শার্ট, ওপরে কালো ব্লেজার এবং কালো ট্রাউজার্স পরা, এবং বিশেষ কায়দায় হেয়ার স্টাইল করা শাহরুখের একটি ছবি পোস্ট করেন। এদিনের অনুষ্ঠানে দীপিকা পরেছিলেন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের ডিজাইন করা একটি শাড়ি ও সাদা রঙের সুন্দর ডিজাইন করা হলটার নেক ব্লাউজ। দীপিকা বললেন, ‘হায়দরাবাদে আমি যখন প্রজেক্ট কে ছবির শুটিং করছিলাম, সেইসময় শাহরুখ এবং পরিচালক অ্যাটলি কুমার দুজনেই হায়দরাবাদে আমার সেটে দেখা করতে এসেছিলেন। ওরা দুজনেই আমার কাছে জওয়ান-এর গল্প ন্যারেট করে করে বলেছিলেন এই ছবিতে ঐশ্বর্যা চরিত্রটির ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। চিত্রনাট্যে চরিত্রটির দৈর্ঘ্য হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু পুরো ছবিটিতে এই চরিত্রটির একটি বিশেষ প্রভাব থেকে যাবে। সব মিলিয়ে এটি একটি দৃষ্টিকোণ। পরিচালক, চিত্রনাট্যকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা একটি চরিত্র। আর শাহরুখ খানের ছবিতে কাজ করতে যাওয়ার ব্যাপারে আমার দুটি ব্যাপার সবসময় কাজ করে। প্রথম কারণ, শাহরুখ খানের ছবি দিয়েই আমার অভিনয় জীবনের শুরু। শাহরুখের যে কোনও আমন্ত্রণে আমি সাড়া দেবই। দ্বিতীয়ত, জওয়ান ছবিতে আমার চরিত্রটির গুরুত্ব। যখন কোনও একটি ছবিতে আমি আর শাহরুখ একসঙ্গে কাজ করি, তখন সেটা শুধুই একজন সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করা হয় না। শাহরুখের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কোনও ফরমাল সহকর্মীর নয়। ভালোবাসার সম্পর্ক, যা পর্দাতেও বোঝা যায়। জওয়ান ছবিতেও তাই হয়েছে। এরজন্য সমস্ত দর্শকের এমন প্রতিক্রিয়ায় আমরা অভিভূত।‘
পরিচালক অ্যাটলি বললেন, ‘কোভিডের সময় আমি জুম কলে শাহরুখ স্যারকে এই ছবির গল্প ন্যারেট করেছিলাম। সেইসময় সিনেমা হলে মানুষের আসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আমি একথাও জানতাম কোভিড মিটে যাওয়ার পরেও থিয়েটারে মানুষের আসতে অনেক সময় লেগে যাবে। সুতরাং মানুষকে সিনেমা হলে ফিরিয়ে আনতে শুধুমাত্র ৩০-৪০ কোটির বাজেটে হবে না। এটা আমি জানতাম কেননা আমি নিজেই একজন সিনেমার প্রডিউসার। শাহরুখ স্যার আমাকে ৩০০ কোটি বাজেট ধরে চলার কথা বললেন। কিন্তু ছবি তৈরি করতে গিয়ে আমরা ৩০০ কোটিও ছাড়িয়ে গিয়েছি। কিন্তু ছবি রিলিজের তিনদিনের মধ্যেই আমরা ব্লকবাসটার হয়েছি। আর এখন তো রীতিমতো উড়ছি।‘