প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: সামনেই সংসদের বাদল অধিবেশেন। আর সেই অধিবেশনে এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি খসড়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অন্যদিকে দেওয়ানি বিধির বিরোধিতায় একজোট হচ্ছে বিরোধীদের একটি বড় অংশ। এই আবহে সোমবার বর্ষীয়ান বিজেপি সাংসদ সুশীল মোদির নেতৃত্বে আইন ও সামাজিক ন্যায় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা নিয়ে সরকারপক্ষের মাত্রাতিরিক্ত সক্রিয়তার উদ্দেশ্য বিধেয় জানতে চাইল জাতীয় কংগ্রেস, ডিএমকে সহ বিআরএস’র মতো বিরোধী দলগুলি। একই সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্তের পরিণতি ভবিষ্যতে ভালো হয় না, তা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিয়েছেন মণিকম টেগোর, আন্দিমুত্থু বা এ রাজা, জসবীর সিং, বিবেক তংখার মতো শীর্ষ বিরোধী দলীয় প্রতিনিধিরা।
সংসদীয় সূত্রের দাবি, এদিন দুপুর তিনটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ‘ইউসিসি’ বা ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। এতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ণের গুণাগুণ ব্যক্ত করা হয়। এরপরে বিরোধী সরাসরি সরকারকে এই বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে চেপে ধরেন। এই বিধি প্রণয়ণের নেপথ্যে কেন্দ্র সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য কি? কেন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে এত মাতামাতি শুরু করল মোদি সরকার? সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা। কংগ্রেস সাংসদ মণিকম টেগোর ও ডিএমকে সাংসদ এ রাজা এও প্রশ্ন রাখেন, ২০১৮ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি নিয়ে একবিংশতম আইন কমিশনের প্রস্তাবনা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে কেন? সংশ্লিষ্ট কমিশনে বলা হয়েছে এ মুহূর্তে এই বিধি দেশে লাগু করা মোটে অত্যাবশ্যক নয়। অথচ, কমিশনের রিপোর্টকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করছে সরকার? এ প্রসঙ্গে দ্বাদশ আইন কমিশন বলেছে প্রায় ১৯ লক্ষ অভিমত এসেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে, কিন্তু তার কোন পুঙ্খানুপুঙ্খ বয়ান কেন বিরোধীরা দেখতে পায়নি, তারও জবাব চেয়েছেন সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী শিবির।
এদিন বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কেন্দ্র সরকারের এই পদক্ষেপে দেশে ধর্মীয় বাতাবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তো? এই ক্ষেত্রে রাজ্য গুলির কি ভূমিকা হবে তা স্থির করা হয়নি এখনও। সেক্ষেত্রে রাজ্য গুলির সঙ্গে কবে কথা বলবে কেন্দ্র সরকার? রাজ্যকে কেন সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হচ্ছে? প্রশ্ন ছুঁড়ে বিরোধীদের। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী আদিবাসী উপজাতি সম্প্রদায়ের দাবিগুলির সুরক্ষা, তাদের রীতি নীতি নিয়ে কি ভাবছে মোদি সরকার? তা স্পষ্ট করা হয়নি কেন জানতে চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৩৭১ ধারায় বলা হয়েছে সমাজের অনগ্রসর, নিম্নবর্গের মানুষদের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োগ করলে এই অধিকারের কি হবে দেশের সংখ্যালঘুদের কি অভিমত, জানার চেষ্টা করেছে কি কেন্দ্রীয় সরকার? বারংবার উঠেছে প্রশ্ন। এই বিধি প্রণয়ণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অভিমত গ্রহণ করা হোক, তাড়াহুড়ো করে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করা যাবে না, সেক্ষেত্রে এর ফল হতে পারে মারাত্মক, দাবি বিরোধীদের। কমিটি চেয়ারম্যান সুশীল মোদির দাবি, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে এটি একটি প্রাথমিক বৈঠক। ভবিষ্যতে এমন বৈঠক আরও হবে। একইসঙ্গে সরকারকে এই বিধি নিয়ে খসড়া প্রস্তুত করতেও নির্দেশ প্রদান করেছেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিনের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। বিজেপি ছাড়াও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইস্যুতে সরকারকে সমর্থন করেন বিএসপি, শিবসেনা ও অন্যান্য সরকার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলগুলি।