- শিমূল সরকার
পৃথিবীর জ্বর হয়েছে। শীতের দৈর্ঘ্য ক্রমশ কমছে। প্রবচন মেনে মাঘের শীতে আর বাঘ পালায় না। বলতেই পারেন, বাঘ থাকলে তো! বাংলাতে শীতের প্রকোপে উত্তর-দক্ষিণ ভাগটা বেশ প্রকট। শীতের আয়ু উত্তরে ঈষৎ দীর্ঘ। উত্তরে শীতের কামড় বয়স্কদের কথায় আগের মতো জোরদার নয়। তবু সেই কামড় নিশ্চিত দক্ষিণকে কাঁপিয়ে দেবে। এই বছরের মতো হঠাৎ যদি ঠান্ডা পড়ে ও লম্বা সময় থাকে তখন? চিন্তার কারণ। তেমন যতই যন্ত্র আসুক, গাড়ি বা ট্রেন চলাচলের বড় বাধা কুয়াশা। উত্তরে কুয়াশার দাপট নিঃসন্দেহে দক্ষিণের থেকে বেশি। এইসব তথ্য যাঁরা উত্তর-দক্ষিণ দুই বঙ্গেই কাজ করেছেন, তাঁদের পরিচিত। অথচ বর্ষাকালের মতো সতর্কতা? শীতের জন্য কি পরিকল্পনা না থাকলেও চলে?
বর্ষা বা খরা যতটা গুরুত্ব পেয়ে থাকে, শীত পায় না। এটা বাস্তব। কারণ শীতের আয়ু সীমিত। উত্তর ভারত ঠেকে শিখে, কিছু পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে। কারণ তাদের শীতে প্রাণহানির ঘটনা বিরল নয়। শীতে দুটো বড় সমস্যা। এক, বয়স্ক ও ছোট শিশুদের বিষয়ে। হাসপাতাল জাত করা উত্তরের গরিব নাগরিকদের কাছে এক সমস্যা। কারণ এই সময়ে যাঁরা চা বাগানে রোজে কাজ করেন, তাঁদের কাজ থাকে না, অধিকাংশ বাগান বন্ধের কারণে। ফলে টানাটানির সংসারে শীত ঠেকানোর জন্য দানে পাওয়া কম্বল অথবা জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠ ভরসা। ছোট ঝুপড়ির মধ্যে কাঠের আগুনে সারারাত নিশ্চিত থাকাটা এই শ্রেণির নাগরিকদের কাছে বেশ ঝুঁকির। সেই ফিজিক্সের প্রশ্ন। শীতের সকালে জানলা দরজা বন্ধ ঘরে দেখা গেল পরিবারের সকলে মৃত। কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের মরণ নৃত্য। ঠিক তেমন সম্ভাবনা, রাতে অসাবধানে আগুনের ফুলকি উড়ে পুরো বস্তির দফা-রফা। অথবা শোবার আগে বিড়িতে সুখটান। পেটের তরলে তখন অচল চেতনা। ঘটে যায় অগ্নিকাণ্ড। আগুন যোদ্ধারা খবর পেয়ে আসার আগেই আগুনের করাল গ্রাসে থমকে যেতে পারে জীবন। অগ্নি যোদ্ধাদের অবস্থান শহর বা গঞ্জে। আসতে সময় নেবেই।
ভবঘুরেদের অবস্থা ভাবুন! তাঁরা যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে চাতক চাহনিতে চেয়ে থাকেন সূর্য কখন উঠবে। কখনও জীবনের আলোই নিভে যায় এই প্রতীক্ষাতে। তবে আমেরিকা বা ইউরোপের মতো জঙ্গলে আগুন বিরল। বনে পোড়া কাঠ পড়ে থাকতে দেখেছি। কিন্তু দাবানল খুব কম ঘটে।
পরের বিপদ কুয়াশা। তার ঘনত্ব বহুসময় সারা দিনেও হালকা হয় না। উন্নত দেশের কুয়াশাভেদী আলোর ব্যবহার এদেশে কম। কোথায় কুয়াশা জমে আছে, এটা ড্রোন দিয়ে অনায়াসে নজরদারি করা চলে। রাস্তায় চলমান গাড়ির সংঘর্ষ এড়ানো বর্তমানের প্রযুক্তিতে ঠেকানো কঠিন এক পরীক্ষা।
জঙ্গল এলাকাতে কুয়াশার মাঝে বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার বিষয়ে বন দপ্তরও স্বছন্দ বোধ করে না। সমস্যা দ্বিমুখী। একদিকে চোরাশিকারিদের সুযোগ না দেওয়া। অন্যদিকে বন্যপ্রাণী বিশেষত হাতির হাত থেকে বসতির নাগরিকদের সুরক্ষিত করা। হাতিদের বিপদও কম নয়। তামিলনাডু বাস্তব সময়ের ক্যামেরাতে জোগাড় করা হাতি চলার পথের তথ্য রেলের সিগন্যালের সঙ্গে বিনিময় করে। সাফল্য এসেছে।
ছোট করে বললে, বর্ষাকালের মতো শীতকালের জন্য রূপরেখা জরুরি। রাতের আশ্রয় প্রস্তুত রাখা উচিত। বিশেষত শীতে বৃষ্টি হলে। অল্প সময়ের জন্য হলেও শীতে প্রাণহানি হয় না, এটা ভুললে বড় ভুল হবে।
( লেখক পুলিশ অফিসার। উত্তরবঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন)