ওদলাবাড়ি: পাহাড়ি পাকদণ্ডি বেয়ে বাগ্রাকোট থেকে সিকিমগামী দু’লেনের নতুন ৭১৭ এ জাতীয় সড়কের আকর্ষণ তো রয়েইছে। এবার সড়কের জিরো পয়েন্টে অর্থাৎ বাগ্রাকোটে রেললাইনের ওপর আরওবি নির্মাণেও চমক অপেক্ষা করছে। সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে আগামী জুন মাস থেকে মসৃণ এই পথে বাধাহীনভাবে কাফেরগাঁও তো বটেই তারও পরে বাংলা-সিকিম সীমানার ঋষি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যাবে। সড়ক নির্মাণকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএইচআইডিসিএল সূত্রে এমনই তথ্য সামনে এসেছে।
এনএইচআইডিসিএলের প্রোজেক্ট ম্যানেজার প্রতাপ শর্মা বুধবার বলেন, ‘জিরো পয়েন্টে রেললাইনের ওপরের আরওবি অংশটুকু বাদ দিয়ে দু’পাশের উড়ালপুল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী দু’মাসে শেষ কাজ হয়ে যাবে।’ ওদলাবাড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ঘিস সেতু পেরিয়ে তৈরি করা নতুন দুটি লুপ ব্যবহার করে উড়ালপুল দিয়ে সরাসরি সিকিমে চলে যাবে দু’লেনের জাতীয় সড়ক। ইতিমধ্যেই সড়কের এই রাজ্যের অংশের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজ রেললাইনের দু’পাশের উড়ালপুলের মাঝে সংযোগ স্থাপনের জন্য বিশেষ প্রযুক্তিতে স্টিলের আরওবি তৈরি করা হচ্ছে। যা পর্যটকদের কাছে এই যাত্রাপথের অন্যতম সেরা আকর্ষণ হতে চলেছে বলে দাবি প্রতাপ শর্মার। তিনি বলেন, ‘বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারি সংস্থাকে আগামী মে মাসের মধ্যে আরওবি নির্মাণকাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’
বাস্তবে বাংলা ও সিকিম দু’রাজ্যজুড়ে চলতে থাকা সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে ইন্দো-চিন সীমান্তের নাথু লা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে সড়ক যোগাযোগের বিকল্প পথ খুলে যাবে। যা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত ‘ডোকালাম’-কে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে ইন্দো-চিন বিবাদের পর রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার স্বার্থে নাথু লা পর্যন্ত বিকল্প একটি সড়কের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সেই মতো কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণমন্ত্রকের উদ্যোগে ‘ভারতমালা পরিযোজনায়’ ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ে এই সড়ক নির্মাণের কাজ ২০২০ সালে শুরু হয়।
১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নাথুলার সঙ্গে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও। শুধুমাত্র এই সড়কটি দেখতেই যে আগামীদিনে দেশবিদেশের পর্যটকদের ঢল বাগ্রাকোট, চুইখিম, লোলেগাঁও, আলগারা, পেডং, রোরেথাং, পাকিয়াং হয়ে রানিপুল প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে তা নিয়ে আশাবাদী পর্যটন উদ্যোগী রাজ বসু থেকে শুরু করে পেডং, লাভা, লোলেগাঁওয়ের একাধিক হোমস্টে মালিকরা। একবার এই সড়কটি চালু হলে এ রাজ্যের জলপাইগুড়ি ও কালিম্পং জেলার পাশাপাশি পূর্ব সিকিমের ছোট জনপদগুলোতেও পর্যটনকে আঁকড়ে ধরে ব্যবসা বাণিজ্যের বিকাশ হবে বলে রাজ বসু জানিয়েছেন।