প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রশাসনিকস্তরে কাজ করা জীবনের কঠিন এক অধ্যায়। এতটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে তিনি কখনও পড়েননি তাঁর কেরিয়ারে৷ এমনকি বাম আমলেও এত প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়নি তাঁকে৷ সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে এমনই দাবি করে বসলেন বর্ষীয়ান আমলা সঞ্জীব চোপড়া৷ দিল্লি প্রেসক্লাবে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার দ্বারা আয়োজিত ১১তম ‘সিভিল সার্ভিস এন্ড ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন ডায়লগ’ শীর্ষক আলোচনা চক্রে অংশ নিয়ে এমনই মন্তব্য করেন বর্ষীয়ান এই আমলা।
দিল্লির প্রশাসনিক শাসনভার কার হাতে থাকবে, কারা পরিচালিত করবে আমলাদের- এই ইস্যুতে যখন কেন্দ্র বনাম দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকারের দ্বৈরথ যখন তুঙ্গে, অর্ডিন্যান্স জারি করে দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে রীতিমতো কোনঠাসা করেছে মোদি সরকার ও তার জবাবে পুনরায় শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কেজরিওয়াল; ঠিক সেই মুহূর্তে দিল্লি প্রেস ক্লাবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজ নিজ পরিসরে অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করলেন সঞ্জীব চোপড়া, পি কে ত্রিপাঠি এবং সুহাস ব্রোকারের দেশের প্রথমসারির অবসরপ্রাপ্ত আমলারা।
জানা গেছে, কর্মসূত্রে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের অধীনে প্রশাসনিক শাসনভার সামলানোর বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা তাঁরা তুলে ধরেন জনসমক্ষে। এই আলোচনায় অংশ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস তথা ১৯৭৭ সালের ব্যাচের আইএএস অফিসার পি কে ত্রিপাঠি শোনান, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সঙ্গে তাঁর কর্ম অভিজ্ঞতা যেখানে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেত্রী তাঁকে প্রায়শই নিত্যনতুন সুপারিশ লেখার কাজ দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতেন। একইসাথে সুহাস ব্রোকার বলেছেন, এক জাতীয়স্তরের নেতা জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করিয়ে বলেন, ‘এ আমার ভ্রাতৃপ্রতীম। বিশেষ খাতিরযত্ন যেন করা হয়।’ পরোক্ষণেই সেই নেতা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে নীচু গলায় তার পরিচয় জানতে চান, অর্থাৎ তিনি তাঁকে চেনেনই না। এই ঘটনায় হাসির রোল ওঠে প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমলাদের এই জাতীয় ‘অম্লমধুর’ সম্পর্ক নিয়ে বলতে উঠে ১৯৮৫ ব্যাচের আইএএস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব সঞ্জীব চোপড়া বলেন, ‘বাম আমলে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়েও রাজ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে, কিন্তু ২০১১-এর পর প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ পালটে যায়। বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর আমলে কাজ করা ছিল দুরূহ বিষয়।’ মুসৌরীতে আইএএস ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ডিরেক্টর হিসেবে বদলি হওয়ার আগে, বাংলায় বিভিন্ন দপ্তরে উচ্চপদস্থ আধিকারিক রূপে কর্মরত চোপড়ার দাবি, ‘সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দলগুলির কিছু নীতি নির্ধারণ বা কার্যনির্বাহী বিষয় রয়েছে যা মূলত দলের শীর্ষ স্তর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু যে সমস্ত দলগুলি তথাকথিত ‘রেজিমেন্টেড’ নয়, একনায়কতন্ত্র’ই সেখানে শেষ কথা; কর্মসংস্কৃতিতেও তার প্রভাব পড়ে যথেষ্ট।’ তবে এদিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অভাবনীয় স্মৃতিশক্তি তথা একক নেতৃত্বের তারিফও করেন বর্ষীয়ান আমলা সঞ্জীব চোপড়া, দাবি বিশ্বস্ত সূত্রের।