খড়িবাড়ি: খড়িবাড়ির রাজবংশী যুবকের হিন্দি সিনেমায় অভিনয়কে কেন্দ্র করে এলাকায় শোরগোল। সমবয়সী ছেলেদের থেকে শারীরিক উচ্চতা বেশি হওয়ায় এক সময় স্কুল জীবনের কোনও নাটকে তাকে নেওয়া হত না। সেই ছেলে এখন বলিউডের সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে সকলকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। গত ১ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ভিকি কৌশলের শ্যাম বাহাদুর ছবিতে পাকিস্তানি সৈনিকের অভিনয় করেছেন সুজিত কুমার বর্মন। হিন্দি সিনেমায় রাজবংশী যুবক সুজিত কুমার বর্মনের অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে এখন হইচই শুরু হয়েছে। সকলেই তার এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন। তবে ছবিতে পাকিস্তানের সৈনিক হিসেবে তার ৯ সেকেন্ডের রোল থাকলেও এর পেছনে যে কত পরিশ্রম রয়েছে তা তার সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল।
১৯৯০ সালে সুজিতের জন্ম খড়িবাড়ির ব্লকের ভারত নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি এলাকায়। বাবা কাঠ মিস্ত্রি ছিলেন এবং মা গৃহবধূ। তবে বাবা পদ্ম পুরাণ, পালা গানের যাত্রা দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবার সেই সূত্র ধরেই অভিনয় জগতে পা রাখেন ছোট সুজিত। দীর্ঘ কয়েক বছর থাকার পরে সীমান্ত এলাকা ছেড়ে জলপাইগুড়ির শোভাবাড়িতে চলে যান সুজিতের পরিবার। সেখানেই স্কুল ও কলেজের পড়াশোনার পাশাপাশি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন সুজিতবাবু। প্রথমদিকে রাজবংশী শর্ট ফিল্ম করতেন এবং রাজবংশী সিনেমায় মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেন। এভাবে ধীরে ধীরে লকডাইনের আগে প্রথম বাংলা ছবি নিতান্তই সহজ সরল চলচ্চিত্রতে অভিনয় করেন। শেষে প্রথম হিন্দি ছবি ভিকি কৌশল ও মেঘনা গুলজারের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান সুজিত।
সুজিত জানান, প্রথমেই অডিশন নেওয়া হয়েছিল। আমার অভিনয়গুলি ভিডিও করে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল। তারপরেই আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। একদিন হঠাৎ ব্যারাকপুরে আমার ডাক পড়ে। সেখানেই জানতে পারি শ্যাম বাহাদুরের ছবিতে আমাকে পাকিস্তানের সৈনিকের ভূমিকায় থাকতে হবে। ব্যারাকপুরের একটি জঙ্গলে তিনদিনে শুটিং শেষ হয়েছিল। প্রথমদিনে আমার পোশাক ও মেক আপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দিনে পাকিস্তানের সৈনিক হিসেবে আমাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে আমার মুখের ভাব প্রকাশে তা অভিনয় করে দেখাতে হবে। সেদিনে মেঘনা গুলজারের মতো একজন নির্দেশিকা আমাকে আমার অভিনয়ের জায়গাটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমন দুই ব্যক্তির সম্মুখে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছিল। তবে সুজিত জানান, আমার এই ৯ সেকেন্ডের দৃশ্য আদৌ গোটা ছবিতে রাখা হত কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। যেদিন ছবিটি রিলিজ হয় সেদিন বাড়ির পাশেই সিনেমাহলে গিয়ে গোটা ছবি দেখে আসি। ছবিতে আমার দৃশ্য দেখে আমি অনেকটাই খুশি হয়েছিলাম। আগামীদিনে একটি হিন্দি ওয়েবসিরিজে কাজ করার কথা চলছে। তবে জন্মস্থান খড়িবাড়ি হলেও সুজিত এখন জলপাইগুড়িতেই থাকেন। শিশু, দিন মজুরদের তিনি অভিনয় শেখান।