হলদিবাড়ি: প্রৌঢ়ের মৃত্যুরহস্য খোলসা হল। রীতিমতো ফিল্মি কায়দায় দুজন সুপারি কিলার দিয়ে হলদিবাড়ি শহরের ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা সন্তোষ মিত্র নামে অকৃতদার ওই প্রৌঢ়কে খুন করা হয় বলে পুলিশের দাবি। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সন্তোষের প্রতিবেশী এক গৃহবধূ এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। পুলিশ পিংকি রায় নামে ওই মহিলার পাশাপাশি এই ঘটনায় সুপারি কিলার হিসেবে যুক্ত শিলিগুড়ির বিবেকানন্দনগর এলাকার বাসিন্দা রাজকুমার রায় ও শিলিগুড়ি সংলগ্ন পূর্ব ধনতলা জয়নগর এলাকার বাসিন্দা রাজা রায়কে গ্রেপ্তার করেছে। মেখলিগঞ্জের এসডিপিও আশিস পি সুব্বাপ্রৌঢ় খুনে বধূ সহ ২ সুপারি কিলার ধৃত বলেন, ‘এই ঘটনায় হলদিবাড়ি শহরের ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা বাপ্পা রায় ওরফে নীলও যুক্ত। সে পিংকির প্রেমিক। তার খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’
হলদিবাড়ি থানায় সাংবাদিক সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ গড়াই বলেন, ‘প্রতিবেশী গৃহবধূর পরকীয়ায় বাধা দেওয়াতেই ওই প্রৌঢ়কে খুন করা হয়েছে। ওই বধূ ও তার প্রেমিক মিলে শিলিগুড়ি থেকে দুজনকে ভাড়া করে এনে ঠান্ডা মাথায় গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’ ধৃতদের রবিবার মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক ওই বধূকে ১৫ দিনের বিচার বিভাগীয় হেপাজত ও বাকি দুজনকে সাতদিনের পুলিশ হেপাজতে পাঠিয়েছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি ক্ষুদিরামপল্লিতে নিজের বাড়ির দোতলার সিঁড়ি থেকে রক্তমাখা অবস্থায় সন্তোষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। কী কারণে তাঁকে খুন তা পুলিশকে বেশ ভাবাচ্ছিল। হলদিবাড়ি থানার আইসি কাশ্যপ রাই বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা অকৃতদার সন্তোষবাবুর বাড়ির চত্বরে মহিলাদের ব্যবহার করার একটি সামগ্রী পাই।’ ঘটনায় কোনও মহিলার যোগ থাকতে পারে ধরে নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালাতে থাকে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সন্তোষের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ তুলে পিংকি তার কিছুদিন আগে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিল। এরপরই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা জোরকদমে তদন্ত শুরু করেন। পিংকি ও তার স্বামী অলোক রায়কে ডেকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর গোটা ঘটনাটি তদন্তকারীদের সামনে অনেকটাই পরিষ্কার হয়।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, পরকীয়া নিয়ে সন্তোষ মাঝেমধ্যেই পিংকিকে উত্ত্যক্ত করায় নীল তা মেনে নিতে পারেনি। দুজনে মিলে সন্তোষকে খুনের ছক কষে। পরিকল্পনা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজকুমার ও রাজা হলদিবাড়িতে চলে আসে। ওই রাতে অন্ধকারে নীল ও বাকি দুজন সন্তোষের বাড়ি যায়। সেখানে সন্তোষের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। তারপর তিনজনে মিলে ওই প্রৌঢ়কে খুন করে সেখান থেকে চম্পট দেয়। ঘটনার ২০ দিন বাদে পুলিশ রহস্যভেদ করায় এলাকায় স্বস্তি। পাশাপাশি, এলাকার এক বধূই যে গোটা ঘটনায় এভাবে জড়িয়ে থাকতে পারে তা যেন কেউ বিশ্বাসই করে উঠতে পারছেন না।