গাজোল: ভোটগণনা হয়েছে ১১ জুলাই। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় গণনাকেন্দ্র থেকে উদ্ধার হল তিন-তিনটি ব্যালট বক্স। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদা জেলার গাজোলে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাজোল হাইস্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপির বিধায়ক সহ নেতা-কর্মীরা। পরে গাজোলে চলে আসেন উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুও। বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন এবং সাংসদ খগেন মুর্মুর নেতৃত্বে বিডিও অফিসের গেটের সামনে ধর্নায় বসেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। কারচুপির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিডিওকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান সাংসদ।
এদিন বিজেপির কর্মসূচির জেরে গোটা বিডিও অফিস চত্বরে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়। কারও দেখা না পেয়ে বিডিও অফিস এবং পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে তালা মেরে দেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। অবশেষে দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ বিডিও অফিসের প্রবেশ পথে কালো গোলাপ এবং কালো মিষ্টির প্যাকেট ঝুলিয়ে এদিনের মতো অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন সাংসদ, বিধায়ক সহ বিজেপি নেতৃত্ব। তবে এই ঘটনার শেষ না দেখে ছাড়া হবে না বলেও তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন।
সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, ‘পুলিশ, প্রশাসন এবং সাধারণ প্রশাসনের যৌথ মদতে নির্বাচনের নামে প্রহসন করা হয়েছে। একে তো নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে। তার ওপর গণনাতেও ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে। যে সমস্ত ব্যালট বক্সে সাধারণ মানুষের রায় জমা পড়েছে সেই সমস্ত ব্যালট বক্সগুলিকে স্ট্রংরুমে নিয়ে যাওয়া হয়নি। মাঝপথে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই সমস্ত ব্যালট বক্সগুলি। ৮৩ নম্বর বুথের ব্যালট বক্স যে মাঝপথে উধাও হয়ে গিয়েছে আমরা সেদিনই তা বিডিওর নজরে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। বিডিওর কাছে আমাদের প্রশ্ন-ডিসিআরসি থেকে স্ট্রংরুমে যাওয়ার মাঝ পথে ব্যালট বক্স উধাও হয়ে গেল এই বিষয়ে কি তিনি থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন? যদি না করে থাকেন, তাহলে কেন করেননি? আর যদি এফআইআর দায়ের করে থাকেন তাহলে তার তদন্ত এ পর্যন্ত কি হয়েছে? ডিসিআরসি এবং স্ট্রংরুমে কাছে বেশ কিছু ঠিকাদার কি করছিল তার জবাব বিডিওকে দিতে হবে। নিরাপত্তা বেষ্টনিতে থাকা ওই এলাকায় ঠিকাদারদের প্রবেশের অনুমতি কে দিয়েছিল? ওই জায়গায় তাদের প্রবেশের অনুমতি কি নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছিল? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে কেন গ্রেপ্তার করা হল না তার সদুত্তর বিডিওকে দিতে হবে। ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনতে হবে। আমাদের অভিযোগ ব্যালট বক্স সরিয়ে ফেলার পেছনে কয়েকজন ঠিকাদারের হাত রয়েছে। অবিলম্বে এই সমস্ত ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এবং সাধারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় গোটা রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করে আবার নতুন করে পঞ্চায়েত ভোটের দাবি জানাচ্ছি আমরা।’
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীনেশ টুডু বলেন, ‘ওই বুথের ব্যালট বক্স হারিয়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার ভোট নেওয়া হয়েছে ওই বুথে। মানুষের রায় আমাদের পক্ষে গিয়েছে। বিজেপি ভালো ফলাফল করতে না পারায় এখন একটা উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করছে। তবে ব্যালট বক্স কীভাবে উধাও হয়েছে তার জবাব দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ বিষয়ে যা বলার তা নির্বাচন কমিশনই বলবে।’
তবে গণনা পর্ব মিটে যাওয়ার ছ’দিন পর গণনাকেন্দ্র থেকে যেভাবে ব্যালট বক্স উদ্ধার হল তাকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গাজোলে। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে আমজনতা।