জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি: কাঁচা চা পাতার অভাবে জলপাইগুড়ি জেলার ১২৪টির মধ্যে ৬০টি বটলিফ ফ্যাক্টরি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার আইটিপিএ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে চা বলয়ের কালচিনি সাব-ডিস্ট্রিক্টে ১৪.১ শতাংশ, জয়ন্তী সাব ডিস্ট্রিক্টে ৭.৪ শতাংশ, দলগাঁও সাব-ডিস্ট্রিক্টে ৬.৪ শতাংশ চায়ের উৎপাদন কম হয়েছে। আইটিপিএ প্রোজেক্ট টি গার্ডেন ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সার্বিকভাবে চায়ের সেকেন্ড ফ্লাশে এখনও পর্যন্ত ৯০ শতাংশ চায়ের উৎপাদন কম হয়েছে। প্রথম ফ্লাশে উৎপাদন কম হয়েছে ৪০ শতাংশ।
আইটিপিএ’র ডুয়ার্স শাখার সম্পাদক রাম অবতার শর্মা জানিয়েছেন এপ্রিল মাস পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২৪.৫ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হবার জেরে চায়ের উৎপাদনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে কুর্তি চা বাগানে সবচেয়ে ভালো চা পাতা উৎপাদন হয়। এবারে প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য এই চা বাগান কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই চা শ্রমিকদের সপ্তাহে তিনদিন সাল ছুটি দিয়েছে। (বাৎসরিক প্রাপ্ত ছুটি থেকে দেওয়া হচ্ছে)। জয়বীরপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার লিখিত নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে মে মাসে টাকার সংস্থান হলে তারা শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারবে। এদিন এই বাগিচা কর্তৃপক্ষ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছে। জয়বীর চা বাগানেও সপ্তাহে তিনদিন কাজ হচ্ছে। দীর্ঘ ৫০ বছর চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, চা শিল্পকে অতীতে এমন প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয়নি।’
প্রোজেক্ট টি গার্ডেন ফোরামের আহ্বায়ক জয়ন্ত বণিক বলেন, ‘৬৪টি বটলিফ ফ্যাক্টরি কোনওরকমে চলছে। এই ফ্যাক্টরিগুলিতে প্রতিদিন মাত্র ১ হাজার ৫০০ কেজি থেকে ৭০০ কেজি কাঁচা চা পাতা আসছে। ইতিমধ্যেই ৬০টি বটলিফ ফ্যাক্টরির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারণ কাঁচা চা পাতার সরবরাহ নেই। মে মাসের সাতদিন অতিবাহিত হবার মুখেও আবহাওয়ার কোনও পরিবর্তন নেই। সেকেন্ড ফ্লাশে উৎপাদনের ৯০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে আগামীতে চা বাগানের প্রতিদিনের কাজ চালাব তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।’
নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নীরজ পোদ্দার বলেন, ‘চা শিল্প গভীর সংকটের মুখে। অতীতে এই সংকটের মুখে চা শিল্প পড়েনি। কাঁচা চা পাতার অভাবে বটলিফ কারখানার মালিকরা সামনে কোনও বিকল্প পথ না থাকাতে ৬০টি বটলিফ কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন যে সামান্য কাঁচা চা পাতা আসছে – তা কৃত্তিম সেচ ব্যবস্থার প্রয়োগের মাধ্যমে। এই কাঁচা চা পাতা দীর্ঘদিন পাওয়া যাবে না। বৃষ্টি হলেও চা বাগানগুলি উৎপাদনের ছন্দে ফিরতে অনেক দেরি হবে। এই অবস্থায় চলমান কারখানাগুলি তারা কতদিন চালাতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে। রোগপোকার আক্রমণ সমস্যা আরও বাড়িয়েছে।’