উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আরও দুটি নতুন জনস্বার্থ মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দুটির শুনানি হয় মঙ্গলবার। জনস্বার্থ মামলা দু’টি করেন উজ্জ্বল ত্রিবেদী এবং ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ নামে একটি সংগঠন। মামলাকারীদের আবেদন, কী করে আট ঘন্টায় ৭৬ হাজার মনোনয়ন দাখিল করল তৃণমূল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, এবং যারা মনোনয়ন জমা করতে পারেননি তাদের পুনরায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এর পাশাপাশি, মিথ্যা মামলা থেকে বিরোধী প্রার্থীদের রেহাই এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হস্তক্ষেপে তদন্ত হোক। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী বুধবার।
মঙ্গলবার এই জনস্বার্থ মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং শামিম আহমেদ। তাঁরা এদিন আদালতের সামনে তুলে ধরেন একের পর এক হিংসার দৃষ্টান্ত। রাজ্যের নানা জায়গায় মনোনয়ন জমা দেওয়ায় বাধা দেওয়া হয়েছে। দাসপুরে পুলিশ এক মহিলাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে বাধ্য করা হয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশি প্রহরায় বিরোধীদের নিয়ে গিয়েও সময়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায়নি। একটি মামলায় প্রার্থীর নথিবিকৃতির অভিযোগ রয়েছে। আইজীবীদের সওয়াল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিন্দাজনক। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, এই ভোটে রাজ্য প্রশাসনের হাতে অনেক ক্ষমতা। যাঁরা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হোক। ওই সব এলাকায় নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। যাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, আবার সুযোগ দেওয়া হোক। আট ঘণ্টায় ৭৬ হাজার মনোনয়ন দাখিল করা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে কমিশনের আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘এই মামলায় বলা হয়েছে, শেষ দিনে বিশাল সংখ্যক মনোনয়ন দাখিল করা হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই বিষয়গুলি সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা। পুরো মামলাটি করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের খবরের উপর ভিত্তি করে।’’ আইনজীবীর আরও সংযোজন, ‘‘শাসকদল যদি স্বল্প সময়ে বেশি মনোনয়ন জমা দেয় সেখানে কমিশনের কী করার আছে? এই বিষয়টি কমিশনের বোধগম্য নয়। এখানে কী ভাবে নির্বাচন বাতিলের প্রসঙ্গ উঠতে পারে!’’
প্রধান বিচারপতি জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের হার ৯.১ শতাংশ কম। তার পরেই আইনজীবী বিকাশরঞ্জনের সওয়াল, কেন ১০ শতাংশ আসনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবে একটি দল? কেন ১০০ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করা যাবে না? বিদেশ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটাও কি ঠিক আছে? প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কোথায় এটা হয়েছে? বিকাশ জবাব দেন, ‘‘মিনাখাঁ।’’
কমিশনের আইনজীবী জিষ্ণু সাহা জানান, কিছু পরিস্থিতি বা ঘটনার জন্য আদালত কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছে। মনোনয়নের শেষ দিনে আদালতের হস্তক্ষেপের জন্য অনেককে সময় দেওয়া হয়েছে। চোপড়ার বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি মনোনয়ন কেন্দ্র থেকে খানিকটা দূরে হয়েছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এমন কোনও ঘটনা নেই যেখানে কমিশন জেনেও চুপ করে রয়েছে।’’
কমিশনের আইনজীবী আরও জানান, মামলায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনার রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেই ভোট ঘোষণা করেছেন। যা যা অভিযোগ করা হয়েছে সবই পুরনো। খুনের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন। নির্দিষ্ট করে কোনও ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়নি যে মনোনয়ন দাখিল করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কে, কারা, কোথায়, কেন বাধা দিয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজে চলেছি। অশান্তির কারণে তৃণমূলের সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পরেও কোর্ট যদি তদন্তের নির্দেশ দেয়, আপত্তি নেই। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।