জলপাইগুড়ি: যত্রতত্র ওষুধের দোকানে ডাক্তারদের চেম্বার। রোগী সহ রোগীর পরিবার বসার জায়গা না পেয়ে অপেক্ষা করছেন রাস্তায়। বিষয়টি নতুন কিছু নয়, কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবে? প্রশ্ন উঠছে ক্লিনিক খোলার যথাযোগ্য নিয়ম মেনেই কি ডাক্তারের চেম্বার করা হচ্ছে? না, অনেকেই সেই নিয়ম মানছেন না। কবে মানবেন, কিংবা এতে লাগাম টানা হবে কীনা, সে ব্যাপারে স্পষ্ট উত্তর নেই।
জলপাইগুড়ি শহরে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে, ক্লিনিকের সামনে দেখা যায় ডাক্তারদের নাম সহ ভিজিটের সময়সূচি। আর সকাল থেকে রাত অবধি দোকানের সামনে ডাক্তার দেখানোর ভিড়। বেশিরভাগ সময়ই ভিড় এতটাই থাকে যে বসার জায়গা না পেয়ে রোগী সহ পরিজনদের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যাঁরা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে আসেন, তাঁদের গাড়িতেই অপেক্ষা করতে হয়। হলদিবাড়ি থেকে জলপাইগুড়িতে এমনই এক দোকানে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন অঞ্জলি রায় বর্মন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের সমস্যা বাথরুম যাওয়া নিয়েই। বাথরুম হলে ভালো হয়। ডাক্তারের চেম্বার করতে হলে উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকা দরকার।’ দোকানের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন প্রলয় সরকার। বলেন, ‘দোকানে তো মাত্র দুটো বেঞ্চ। খালি নেই। কী করব? দোকানের সব চেম্বারেই একই সমস্যা।’
এ ব্যাপারে কী বলছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা? জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অসীম হালদার বলেন, ‘ওষুধের দোকানে চেম্বার খুলতে গেলে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিস্টমেন্ট লাইসেন্স দরকার৷ তা ছাড়া সম্ভব নয়। মালিকপক্ষকে ওই লাইসেন্সের শর্তাবলি মেনে চেম্বার খুলতে হয়। নিয়ম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের উপর আমাদের নজরদারি চলছে।’ যে সমস্ত ওষুধের দোকানে চেম্বার রয়েছে, তাদের অনেকেই নির্দিষ্ট নিয়মের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। জানেনই না, কী এই ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিস্টমেন্ট লাইসেন্স। সুতরাং নিয়মগুলোও জানা নেই।
এবার আসা যাক ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিস্টমেন্ট লাইসেন্স প্রসঙ্গে। ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিস্টমেন্ট-এর ব্যাপারে বলা রয়েছে, চেম্বারের সঙ্গে ওষুধের দোকানের কোনও সংযোগ থাকবে না। চেম্বার পুরো আলাদা হতে হবে। রোগীদের বসার জন্য ওয়েটিং রুম থাকবে। মহিলা-পুরুষের জন্য পৃথক শৌচালয় থাকবে, চেম্বারে রোগীদের জন্য শয্যা, চিকিৎসকদের জন্য হাত ধোয়ার বেসিন ও সাবান, নাম লেখার জন্য রিসেপশন থাকতে হবে। কিন্তু এসব বিষয়ের তোয়াক্কা না করেই চলছে একাংশ চেম্বার।
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদর জোন সম্পাদক সন্দীপ মিশ্র বলেন, ‘নতুন দোকানগুলো সমস্ত নিয়ম মেনেই তৈরি করা হচ্ছে। বেশ কিছু পুরোনো দোকানে শৌচালয়, বসার জায়গা সেভাবে না থাকলে তারা তা করার চেষ্টা করছে।’
রাস্তার পাশে, পাড়ার গলিতে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বার খোলার ক্ষেত্রে অনেকটাই লাগাম টেনেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। কিন্তু এখনও এমন অনেক ওষুধের দোকান-ক্লিনিক রয়েছে, যেখানে নিয়ম মানা হচ্ছে না। রোগীরা হাতের নাগালে পরিষেবা পাচ্ছেন, ঠিক কথা। কিন্তু নিয়ম জানতে, মানতে অসুবিধে কোথায়? কবেই বা এই বিষয়ের উপর নজর দেওয়া হবে, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। নিয়ম যাতে শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেই দাবি উঠছে।