প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ ১৯৯০ সালের ১৬ অগাস্ট। হাজরা মোড়ে মিছিল করছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মিছিলে আচমকা হামলা চলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায় পড়ে মোটা ডাণ্ডার বাড়ি। ২ বার আঘাত পাওয়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা চলে। মাথায় ফেট্টি বাঁধা অবস্থায় তাঁকে অনেকদিন দেখেছেন মানুষজন। সেদিন মমতার মাথায় সেই আঘাত যিনি করেছিলেন বলে অভিযোগ, সেই লালু আলমের বিরুদ্ধে পরে মামলা দায়ের হয়।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রায় ৩৩ বছর আগেকার সেই ঘটনার প্রসঙ্গ উঠে এল ‘জলসা’য়, কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের বাড়িতে। একদা যুব কংগ্রেস নেত্রী, বর্তমানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কী ভাবে লাগল তাঁর মাথায় আঘাত, কী হয়েছিল সেদিন তা জানতে আচমকা প্রশ্ন করেন অমিতাভ কন্যা শ্বেতা নন্দা। প্রশ্ন শুনে চমকে ওঠেন মমতা। এর পর হাসিমুখে সেদিনের ইতিহাস তুলে ধরেন যা শুনে কার্যত বিস্ময়ে হতবাক বচ্চন পরিবার। শুধু তাই নয়, নিজের মোবাইল গ্যালারি ওপেন করে সেদিন তাঁর কী দশা হয়েছিল তা শ্বেতা সহ বচ্চন পরিবারের সবাইকে দেখান মমতা, এমনই দাবি বিশ্বস্ত সূত্রে৷
বিরোধী দলীয় ‘মুম্বই সামিটে’ অংশ নিতে বুধবার বিকেলে কলকাতা ছেড়ে মুম্বই এসে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুম্বই শহরে পা দিয়েই বিমানবন্দর থেকে সোজা চলে আসেন ‘জলসা’য় বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের বাড়িতে। প্রায় সোয়া একঘন্টা ‘জলসা’য় বচ্চন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান তিনি। মমতাকে ‘জলসা’য় স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিল গোটা বচ্চন পরিবার। জানা গেছে, বয়সে অনেকটাই বড় অমিতাভকে প্রণাম করতে গিয়েছিলেন মমতা, কিন্তু বিগ বি প্রণাম নেননি৷ উল্টে তিনি জোড়হাত করে নমস্কার করেন তৃণমূল নেত্রীকে৷ মমতাকে জড়িয়ে ধরে তাঁকে অন্দর মহলে নিয়ে যান অমিতাভ জায়া জয়া বচ্চন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মমতা এবং তাঁর সঙ্গীদের জন্য চা তৈরি করে দেন ঐশ্বর্যা বচ্চন নিজে৷ সঙ্গে ছিল বাড়িতে তৈরি ‘ভেল পুরী’, ‘শেও পুরী’৷ চা খেয়ে খুব ভালো লাগে মমতার, উনি দ্বিতীয়বার চা দেওয়ার অনুরোধ করেন৷ সঙ্গে সঙ্গেই চা এনে দেন ঐশ্বর্যা৷ মমতা ঐশ্বর্যাকে বাংলায় ‘ঐশ্বর্য’ বলেই সম্বোধন করেন৷ এরপর মমতা অতি যত্নে রাখী পড়িয়ে দেন বচ্চন পরিবারের সবাইকে৷ খোশমেজাজে চলে পুরোপুরি ঘরোয়া আড্ডা। এদিন অমিতাভ-জয়ার সঙ্গে ঐশ্বর্যা এবং অভিষেককেও আগামী কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবের জন্য আমন্ত্রণ জানান মমতা৷ সূত্রের দাবি, দুজনেই সম্মতি দিয়েছেন কলকাতা চলচ্চিত্র উত্সবে যোগ দেবেন বলে৷ মমতা এদিন বচ্চন পরিবারের প্রত্যেককে উত্তরীয় পড়িয়ে দিয়েছেন, সঙ্গে ছিল মহিলাদের জন্য বাংলার বিশেষ শাড়ি৷ মমতার হাতে পালটা উপহার তুলে দেয় বচ্চন পরিবার।
‘জলসা’ থেকে বেরোনোর পরেই মমতা জানান তিনি শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের বাড়ি যেতে চান৷ সঙ্গে সঙ্গেই ফোন যায় উদ্ধবের কাছে৷ তিনি তখন বাড়িতেই ছিলেন৷ মমতা ‘মাতুশ্রী’ গিয়ে উদ্ধবকেও রাখি পরান৷ উদ্ধব পত্নী রেশমি এবং পুত্র আদিত্য ঠাকরেও সেখানে হাজির ছিলেন৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উদ্ধবকে এদিন দুটি পরামর্শ দেন মমতা। প্রথমত: খুব শীঘ্রই আবারও মহারাষ্ট্রে রাজত্ব করবেন উদ্ধব৷ রাজনীতিতে চড়াই-উতরাই আছেই। উদ্ধব আবার ক্ষমতায় ফিরবেন, তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে একথা বলেন মমতা৷ দ্বিতীয়টি যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। এদিন মমতাকে উদ্ধব ঠাকরেকে বলেন, ‘কোনওদিন গদ্দারদের ক্ষমা করো না, তাদের আচরণ মনে রেখো সবসময়৷’ উদ্ধবকে দেওয়া মমতার এহেন উপদেশ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে আরব সাগরের তীরে।