সানি সরকার, শিলিগুড়ি: টাইগারহিলে প্রাইভেট গাড়িতে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও ছাড়পত্র মিলল সিকিম নম্বর গাড়িতে। আর তাতেই সিকিমের প্রতি কেন এত সভানুভূতি, প্রশ্ন উঠল দার্জিলিং পাহাড়ে। ক্ষোভ ছড়িয়েছে সমতলের পর্যটন মহলেও। প্রশ্ন রয়েছে পরিকাঠামো নিয়ে। তবে পুলিশের তরফে তিনটি জায়গা থেকে নতুন করে টোকেন দেওয়ার সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে পর্যটন মহল। দার্জিলিং পুলিশের ডিএসপি (সদর) অরিন্দম অধিকারী বলেন, ‘এখন সাতশো গাড়িকে টোকেন দেওয়া হয়। সদরের ওপর চাপ কমাতে এর মধ্যে থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে দেড়শো টোকেন নতুন তিনটি জায়গা থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জোরবাংলোর পাশাপাশি টোকেন দেওয়া হবে কার্সিয়াং ও সুখিয়াপোখরি থেকে।’
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ নম্বরের গাড়ি চলাচল করতে পারে না। পর্যটকদের ভাড়া করতে হয় স্থানীয় গাড়ি। এমনকি, গ্যাংটকের সাদা দাগের একটু এদিক-ওদিকে চাকা গড়ালেই দিতে হয় জরিমানা। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ দার্জিলিং পাহাড় ও সমতল শিলিগুড়ির পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। এই রাজ্যে সিকিমের গাড়ি চলতে পারলে, ওই রাজ্যের সর্বত্র কেন এখানকার গাড়ির চাকা গড়াবে না, প্রশ্ন তুলে দীর্ঘদিন ধরেই একই নীতির দাবি করছেন দার্জিলিং, শিলিগুড়ির পর্যটন ও পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু নানান আন্দোলনেও অচলাবস্থা কাটেনি। উপরন্তু এর মধ্যে নতুন করে দার্জিলিং পুলিশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাতে সিকিমের নম্বরের গাড়িকে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষযটি সামনে আসায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
অনেকের বক্তব্য, এর ফলে টাইগারহিল থেকে বাড়তি মুনাফা পাবে সিকিমের গাড়িগুলি। ক্ষতির মুখে পড়বে স্থানীয়রা। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্য জয়ন্ত মজুমদার বলছেন, গ্যাংটক ছাড়া সিকিমের অন্যত্র আমাদের গাড়ি চলতে দেওয়া হয় না। সেখানে সিকিমের গাড়িকে পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। আমরা চাই ভারতের সর্বত্র যে নীতি রয়েছে, তা এই অঞ্চলেও বলবৎ হোক। সিকিমের গাড়িকে অনুমতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ পাহাড়ের পরিবহণ ব্যবসায়ী এবং তাঁদের সংগঠনগুলিও। আন্দোলনের প্রস্তুতিও শুরু হচ্ছে। হিমালয়ান ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির সভাপতি এস এন প্রধানের বক্তব্য, এটা মানা যায় না। প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত দিলে এখানকার গাড়িকেও নামচি, লাচেন, ছাংগুর মতো জায়গাগুলিতে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন হবে।
নতুন তিনটি জায়গা থেকে টোকেন দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়ায় খুশি হলেও পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। টাইগারহিলে গাড়ি পার্ক করার যে জায়গা রয়েছে, সেথানে ভালো মতো দাঁড়াতে পারে চারশো গাড়ি। যার ফলে বাকি তিনশো গাড়ি রাস্তায দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। অনেক পর্যটককে হাঁটতে হয় অনেকটা পথ। যানজট মোকাবিলায সমস্যায় পড়ে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য, এখন পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ফলে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পার্কিংয়ে জায়গা না বাড়ালে ভবিষ্যতে আরও সমস্যা বাড়বে।