শিলিগুড়ি: চরম অব্যবস্থা চলছে উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে। এমন অভিযোগই উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সূত্রের খবর, চিকিৎসকদের দেরি করে আসা, ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কাজে না ফেরা ইত্যাদি বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। এইরকম চলতে থাকলে হাসপাতালের অনুমোদন বাতিলের আবেদনও করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। এর আগেও নাকি কাউন্সিল একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াকে আটকে দেওয়া হয়।
উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল অধ্যক্ষ সঞ্জয় দত্ত অবশ্য বলেন, ‘কাউন্সিল রুটিন চেকিংয়ে এসেছিল। অনুমোদন বাতিলের কোনও বিষয় নেই।’ তবে হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর যুক্তি, ‘ডাক্তারদের হাজিরার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক বাধ্যতামূলক নয়। অনেকে নিয়মভঙ্গ করলেও আমি কিন্তু নিয়ম মেনেই অফিস করি। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য ভবনে জানানো আছে।’
সম্প্রতি কাউন্সিল এই হাসপাতালে তদন্তে এসেছিল। ১২-১৩ এপ্রিল কাউন্সিলের সদস্যরা সেখানে ছিলেন। হাসপাতালের কাজকর্ম খতিয়ে দেখার পর সবটা নিয়ে কাউন্সিলের সদস্যরা বিরক্ত বলে জানা গিয়েছে। এখানেই প্রশ্ন ওঠে, বেনিয়মের কথা জেনেও একজন অধ্যক্ষ সব দায় কী করে স্বাস্থ্য ভবনের উপর ঠেলে নিশ্চিন্ত বসে থাকতে পারেন?
শনিবার অবশ্য হাসপাতালে গিয়ে বেনিয়মের ছবিই চোখে পড়ল। হাসপাতালে বহির্বিভাগ খোলা থাকার সময় সকাল নয়টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত। এছাড়া, রোগী থাকলে শেষপর্যন্ত সব রোগী দেখে তারপর ছুটি। কিন্তু সে নিয়মের ধার ধারে কে? সকাল সাড়ে আটটার সময়ও গেট বন্ধ ছিল। নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসা করতে বললেন, ‘আমি ন’টায় গেট খুলব।’ নটায় গেট খোলা হল। কিন্তু একজনও চিকিৎসকদের দেখা মিলল না। রাজগঞ্জের মহানপাড়া থেকে স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে নিয়ে দাঁত দেখাতে এসেছিলেন সমীর আহমেদ। বললেন, ‘দূর থেকে এসেছি, তাড়াতাড়ি হয়ে গেলেই ভালো।’ কিন্তু সেটা হবে কী করে? চিকিৎসকেরই তো দেখা নেই। নয়টা বেজে আঠারো নাগাদ একজন কর্মী এসে বায়োমেট্রিকে হাজিরা দেন। সাড়ে ন’টার একটু পর খোলা হয় আউটডোর। দশটার দিকে রোগীদের ভিড় বাড়ে। সাড়ে দশটা পর্যন্ত চিকিৎসকদের আসতে দেখা যায়।
প্রথমে টিকিট কেটে এক নম্বর ঘরে সমস্যা নিয়ে যান রোগীরা। সেখান থেকে প্রয়োজনে দুই অথবা চার নম্বর ঘরে রোগীদের পাঠানো হয়। বিধাননগরের রাকেশ রায়ের কথায়, ‘এক নম্বর ঘরে ঠিকই আছে, দুই নম্বর ঘরে গেলেই দু’-একজন চিকিৎসককে বিরক্ত হতে দেখা যায়।’ কর্মী এবং চিকিৎসক কম থাকলে উপস্থিতদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে যায়। তখনই সমস্যা হয়। এদিকে জানা গিয়েছে, একজন মহিলা চিকিৎসক ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে চার-পাঁচ মাস হয়ে গেল। এখনও কাজে যোগ দেননি তিনি। বর্তমানে সেই ডাক্তার বিদেশে রয়েছেন বলে খবর।