- শৌভিক রায়
শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশই হল শিক্ষার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই দীর্ঘদিন ধরে এই রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যান্য বোর্ডগুলি কাজ করে চলেছে। তাদের বিপুল অভিজ্ঞতায় তারা প্রত্যেকেই অনন্য। নিজস্বতায় উজ্জ্বল। তবু রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ব্যবস্থার সঙ্গে অন্যান্য বোর্ডের কিছু পার্থক্য নজরে পড়ে বৈকি।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চমাধ্যমিক সংসদের কথা ধরা যাক। আজও বিরাট সংখ্যক ছাত্রের ভরসা তারা। পরিসংখ্যান বলছে, সর্বভারতীয় বোর্ড ছাড়া এত ছাত্র অন্য কোনও বোর্ডে দেখা যায় না। যুগোপযোগী সিলেবাস, অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রত্যন্ত গ্রামেও বোর্ডের স্কুল নিঃসন্দেহে পর্ষদ ও সংসদের সবচাইতে বড় দিক। মাধ্যমিকে সিলেবাস যেমন বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই, তেমনই উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাসও যথেষ্ট ঈর্ষণীয়।
অন্য বোর্ডগুলি এই ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। তবে সিলেবাসের ক্ষেত্রে আইসিএসই কিছুটা সমকক্ষ। কিন্তু তাদের সহ অন্য বোর্ডের স্কুলগুলি শহরকেন্দ্রিক। ফলে, এখনও পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বিকল্প আসেনি। তবে আজকাল সারা বিশ্বেই ‘প্রোজেক্ট ও পেপার বেসড’ পড়াশোনার চল। পর্ষদ ও সংসদ সেটি কিছুটা গ্রহণ করলেও, প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই প্রোজেক্ট ওয়ার্ক থাকলেও সেটা হয়ে গিয়েছে নম্বর বেশি পাওয়ার একটি উপায় মাত্র।
অন্য বোর্ডের ক্ষেত্রে কিন্তু এই বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। আর তাতে আখেরে লাভবান হয় শিক্ষার্থীরা। কেননা উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির ক্ষেত্রেও এই ধরনের কাজ বিশেষ মর্যাদা পায়। শৃঙ্খলাপরায়ণতার দিক থেকেও অন্যেরা এই রাজ্যের বোর্ডের থেকে এগিয়ে। পর্ষদ ও সংসদের সিলেবাসের সামঞ্জস্যহীনতা বোধহয় সবচেয়ে বড় ত্রুটি। ‘মাধ্যমিক যদি ছোট নদী হয়, তবে উচ্চমাধ্যমিক সমুদ্র’, বলে থাকেন অধিকাংশ শিক্ষক। ফলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এসে ছাত্ররা অকুল পাথারে পড়ে।
অন্য বোর্ডগুলিতে এই সমস্যা নেই। সেখানে সিলেবাস যথেষ্ট সহায়ক। ফলে উচ্চমাধ্যমিকের মতো বেছে বেছে পড়বার প্রবণতা তাদের নেই। পাশাপাশি জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট ইত্যাদি পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে সেইসব বোর্ডের সিলেবাস তৈরি হয় বলে, সেসব পরীক্ষায় তাদের সাফল্যের হারও বেশি। সেখানে অনেকটা পিছিয়ে রাজ্যের বোর্ড দুটি।
তবে বছরের পর বছর, বহু সংখ্যক ছাত্র নিয়ে, সুচারুভাবে পরীক্ষা পরিচালনা, নির্দিষ্ট সময়ে ফল প্রকাশ করে পর্ষদ ও সংসদ যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিককে অন্য মাত্রা দিয়েছে। বিভিন্ন বোর্ড আজও তাদের কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে। এই ব্যাপারে তারা অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী।
কিন্তু পথিকৃৎ হলেও, কিছু কিছু ঘটনা সেই সুনামকে নষ্ট করেছে। প্রশ্ন ফাঁসের মতো বিভ্রাট প্রায় প্রতি বছরই ঘটছে। পরীক্ষার সময় বদল, পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিত্যনতুন নির্দেশিকা ইত্যাদিও সবাইকেই বিভ্রান্ত করছে। অন্য বোর্ডগুলি কিন্তু এই ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও জটিলতামুক্ত। ফলে তাদের জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। আধুনিক শহুরে অভিভাবক তাদের দিকেই ঝুঁকছে। আসলে সব সিস্টেমেরই গুণ-দোষ থাকে। পর্ষদ, সংসদ ও অন্য বোর্ডগুলির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। সমস্যা নিয়েও যেভাবে তারা শিক্ষার আলো দিয়ে চলেছে তা সত্যিই তুলনাহীন।