বর্ধমানঃ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে দামোদর নদের উপর তৈরি হয়েছিল হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু। কিন্তু সেতু তৈরি হলেও সেতুতে ৫-৬ বছর হল কোনও লাইট জ্বলে না। বহুলাক আগে সেখানে বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও বর্তমানে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। অবশেষে নিজেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংস্থার এক সদস্য পরিচয়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেকের কাছে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শুরু হয়ে যায় বিদ্যুৎ পর্ষদের তৎপরতা। ইতিমধ্যেই টেন্ডারের কাজ সম্পন্ন, শুধু কাজ শুরুর অপেক্ষা।
‘হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুতে ল্যাম্প পোস্ট আছে, কিন্ত পাঁচ-ছয় বছর হয়ে গেল সেতুতে কোন লাইট জ্বলছে না। বিনীত নিবেদন স্যার, এই বিষয়টা একটু দেখবেন’। ১৪ মে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিনীত ভাবে এই আর্জি রেখেছিলেন নিজেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সেবক(আরএসএস) বলে পরিচয় দেওয়া উজ্জ্বল খাঁ। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাসিন্দা আরএএস-এর সেবক উজ্বলের এমন আর্জিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন গলিয়ে দিয়েছিল। যার প্রকাশ পাওয়া গিয়েছিল ওইদিন রায়নার কাইতির জনসভায় তাঁর রাখা বক্তব্যে। আর এবার উজ্জ্বলের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে আঁধার কাটিয়ে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু ফের আলোকোজ্জ্বল হতে চলেছে।
এই প্রসঙ্গে পুর্ত দপ্তরের পূর্ব বর্ধমান জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক) জয়দীপ চক্রবর্তী বৃস্পতিবার জানান, “আশা করা যাচ্ছে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর আলো জ্বালানোর কাজ দু-এক দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ইতিমধ্যেই এই কাজের টেন্ডার করেছেন। বৃহস্পতিবার টেন্ডার ওপেনিং হয়ে গেছে। কাজ শুরু হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র”।
এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান সাউথ হাইওয়ে ডিভিশন) সঞ্জীব কুমার গরাই জানিয়েছেন,“হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর আলো জ্বালানো সংক্রান্ত কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ একমাস আগেই আমরা সেরে রেখে ছিলাম। এই কাজের জন্য রাজ্যের অর্থ দপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিল। বৃহস্পতিবার মৌখিক ভাবে অর্থ দপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে। এবার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হবে। সেতুতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ দফতরে আবেদনও করে দেওয়া হয়েছে। খুব শিঘ্র হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুতে আলো জ্বালানোর কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার।
জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক আলক মাঝি এই প্রসঙ্গে বলেন,“হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুতে আলোর ব্যবস্থা করার বিষয়টি নিয়ে আমি নানা মহলে চিঠি করেছিলাম। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বিরোধীদের কথাকে মান্যতা না দিয়ে একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছে বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ করে সেটা যে কতটা অসত্য তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। আরএসএস সেবকের আর্জিকে মান্যতা দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন উন্নয়ন কাজের ব্যাপারে তৃণমূল বিরোধীদের মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়”।
জামালপুরের প্রাক্তন বাম বিদায়ক সমর হাজরা বলেন, ‘হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর আলো জ্বালানোর ব্যবস্থার করার জন্য আমরা জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কাছে বহু বার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাতে ফল কিছু হয় নি। এবার যদি আলো জ্বলে তা ভালো’। যদিও বিজেপি যুব মোর্চার জামালপুরের আহ্বায়ক অজয় ডকালের দাবি,“সবটাই গিমিক। পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যবাসী তৃণমূলের পরিকল্পিত এমন আরও অনেক গিমিক দেখতে পাবেন বলে অজয় ডকাল মন্তব্য করেন“। এদিকে আবার অনেকেই মনে করছেন, আরএসএসের পরিচয় দেওয়া যুবক উজ্জ্বল খাঁ অতীতে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে সে তৃণমূলের বুথ সভাপতি। সরটাই রাজনৈতিক গিমিক।
বাম সরকারের আমলে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে দামোদর নদের উপর তৈরি হয় হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু। ২০০২ সালের ৪ আগষ্ট রাজ্যের তদানিন্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাসগুপ্ত ও পূর্তমন্ত্রী অমর চৌধুরী সেতুর উদ্বোধন করেন। এই সেতুর দৌলতে বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে যাতায়াতও সহজসাধ্য হয়ে যায়। উদ্বোধনের পর থেকে টোল মিটিয়েই যানবাহন চালকরা আলোকোজ্জ্বল হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু পার হতেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গ সঙ্গে সেতু পারাপারের জন্য টোল আদায় জারি থাকলেও সেতুতে আলো জ্বলা বন্ধ হয়ে যায়। বাম জামানার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর আলোর দুর্দশা আর কাটে না। বছরের পর বছর আলো বিহীন সেতু দিয়েই চলতে থাকে পারাপার। তা নিয়ে কেউ হেলদোল না দেখানোয় জনমানসে তীব্র অসন্তোষও তৈরি হয়। উজ্জ্বল খাঁ-র আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হওয়ায় সেই অসন্তোষ এবার অস্তাচলে যেতে চলেছে। হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুতে ফের আলো জ্বলবে জেনে খুশি উজ্জ্বলও।