রণজিৎ ঘোষ, বাগডোগরা: রাত বাড়তেই চা বাগান (Tea Garden) থেকে মেয়েদের তুলে এনে হোটেল এবং লজে কাজে লাগানো হচ্ছে। একদিন, দু’দিন পর সেই মেয়েদেরই ভালো রোজগারের টোপ দিয়ে পাচার (Women Trafficking) করে দেওয়া হচ্ছে দিল্লি, মুম্বইয়ে। সেখান থেকে কাউকে আবার সুদূর বিদেশে। এমনই কাণ্ড ঘটছে বাগডোগরায় (Bagdogra)।
কিছুদিন আগে অর্ড চা বাগানের এক তরুণীকে দিল্লিতে (Delhi) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিদেশে পাচারের চেষ্টা হয়। মেয়েটি বিপদ আঁচ করতে পেরে হোটেলের তিনতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। একই ঘটনা ঘটেছে ত্রিহানার এক তরুণীর ক্ষেত্রেও।
অভিযোগ, বাগডোগরার বেশিরভাগ হোটেল এবং লজে রাত বাড়লেই প্রচুর বহিরাগতর আনাগোনা শুরু হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ ছাড়াও সিকিম, বিহার এবং নেপালের ব্যবসায়ীরা এখানে ফুর্তি করতে আসছেন নিয়মিত। এমনকি তাঁদের পরিচয়পত্রও জমা রাখা হচ্ছে না। এই হোটেল এবং লজগুলিকে ঘাঁটি করে তাদের মাধ্যমেই এখান থেকেই মেয়ে পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) তন্ময় সরকার অবশ্য দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘এই ধরনের ঘটনাকে সংগঠন কোনওভাবেই সমর্থন করে না। কোনও হোটেল, লজে এসব বেআইনি কাজকর্ম হয়ে থাকলে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’
বাগডোগরা বিহার মোড় এবং সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি প্রচুর হোটেল, গেস্টহাউস, লজ গজিয়ে উঠেছে। অভিযোগ, অধিকাংশ হোটেল, লজেই ঘণ্টাভিত্তিতে ঘরভাড়া দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে পুরুষ, মহিলারা একসঙ্গে এসে এক-দেড় ঘণ্টা হোটেলে কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে তাদের নথি রাখা হচ্ছে না। সেই কারণে মোটা টাকা খরচ করতেও পিছুপা হচ্ছে না খদ্দেররা। দিনের আলোয় এই কারবার চললেও পুলিশের কোনও হেলদোল নেই। আবার সন্ধ্যা নামলেই ভিনদেশি ও ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলেছেন, প্রতি রাতে এরাজ্যের পাশাপাশি সিকিম, বিহার, নেপাল নম্বরের গাড়ি এখানকার হোটেল, লজগুলির সামনে ভিড় করে। রাতভর গাড়িগুলি থেকে ভোর হতে হতে চলে যায়। প্রায়দিন একই নম্বরের গাড়ি দেখা যায়। এরাই মূলত পাচারের ঘটনায় যুক্ত বলে সন্দেহ তাঁদের।
দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এইড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলছেন, ‘এর আগেও বাগডোগরার বেশ কিছু লজ, হোটেল নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। চা বাগানের বেশ কিছু মেয়েকে প্রথমে এখানে এনে কাজে লাগিয়ে পরে মোটা রোজগারের টোপ দিয়ে বাইরে পাচার করা হয়েছে। বিমানবন্দর কাছে হওয়ায় বাগডোগরাকে ঘাঁটি করে এখান থেকে বিমানে পাচার করা হয়।’
সূত্রের খবর, বাগডোগরা, নকশালবাড়ি সহ মহকুমার বিভিন্ন চা বাগান থেকে মেয়েদের মোটা রোজগারের টোপ দিয়ে এই হোটেলগুলিতে নিয়ে আসা হয়। এরপর হোটেলে দেহব্যবসার কাজে লাগিয়ে প্রতি রাতে দেড়-দুই হাজার টাকা হাতে দেওয়া হয়। এভাবে কয়েকদিন কাটার পর আর্থিকভাবে অসচ্ছল চা বাগানের তরুণীদের বাইরে নিয়ে গিয়ে ভালো কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখায় দালালরা। অনেকেই লোভে পড়ে রাজি হয়ে যান। তারপর সেই তরুণীদের নিয়ে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেহব্যবসার কাজে লাগানো হয়। কাউকে কাউকে আবার বিদেশে পাচারের নজিরও রয়েছে।
অমিতের বক্তব্য, ‘প্রথমে বাড়ির পরিচারিকার কাজ করাতে নিয়ে গিয়ে পরে দেহব্যবসা সহ অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়। এখানেও প্রচুর এজেন্ট রয়েছে, যারা কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করে।’