রায়গঞ্জ: বাড়িতে রয়েছে ছোটখাটো চিড়িয়াখানা। পথ কুকুর, বিড়াল, গোরু, ছাগল, মুরগি, হাঁস, কোকিল থেকে শুরু করে কি নেই সেখানে? রায়গঞ্জের বাহিন অঞ্চলের চাপদুয়ার গ্রামে দাস পরিবার বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন এমন চিড়িয়াখানা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এদের রান্না, খাওয়ানো, চিকিৎসা থেকে যাবতীয় কাজ দিন রাত করেন দাস পরিবারের মেয়ে বছর ৪৫-র বীথিকা দাস। তবে এত কিছু সামলানোর পরেও তিনি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় রেগুলার এমএ কমপ্লিট করলেন। এবছর ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাস করেছেন বীথিকা দেবী। তাঁর ইচ্ছে আগামীতে পিএইচডি করবেন। আগামীতে উচ্চশিক্ষিত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করতে চান তিনি। ২০২১ সালে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ কোর্সে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে এমএ পড়ার অনুমতি দেন।
অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের মতো ইচ্ছেপূরণ করতে বাড়ি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮ কিমি সাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন এবং মনোযোগ সহকারে ক্লাস করতেন বীথিকা। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ক্লাস করতে কোনও সমস্যা হত না তাঁর। বীথিকাদেবীর বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা রেবা দাস এবং দুই ভাই বিলাস দাস ও পলাশ দাস। বাবা যোগেশ চন্দ্র দাস প্রয়াত হয়েছেন ১২ বছর আগে। এরপর দুই ভাই ও মাকে নিয়ে কোনও মতে সংসার চলছে তাঁদের। সামান্য কিছু জমি আছে, সেখান থেকে যা কিছু আসে তা দিয়ে চলে। তবে নিজেদের সংসার চালানোর পরেও কুকুর-বিড়ালদের নিয়ে আলাদা সংসার রয়েছে দাস পরিবারের।
বীথিকা বলেন, ‘প্রায় ২৬ বছর ধরে এদের নিয়ে সংসার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এদের সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতাম। যে কোনও বয়সে পড়াশোনা করা যেতে পারে। আরও পড়তে চাই। আমি বয়সে অনেক বড় হলেও সবাই খুব সাহায্য করতেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে ছোট ভাই বোনেরা সাহায্য না করলে পাশ করতে পারতাম না। তাই পড়াশোনার ইচ্ছেটা আরও বেড়ে গিয়েছে।‘ তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আয় বলতে জমির ফসল বিক্রি করে যতটুকু আসে। তা দিয়ে আমাদের পাশাপাশি কুকুর, বিড়াল, হাঁস, মুরগী, পাখি পোষার খরচ চলে। এভাবেই পড়াশোনা করে ২০২০ সালে বাংলায় অনার্স নিয়ে স্নাতকে ডিগ্রি অর্জন করেছি। এরপরই গতবছর এমএ-তে ভর্তি হই।‘
বীথিকাদেবীর বাড়িতে রয়েছে ২৫টি পথকুকুর, ৭টি বিড়াল, ৬টি গোরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং একটি কোকিল। খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর এদের জন্য রান্নাবান্না সহ অন্যান্য কাজকর্ম সেরে সাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে রওনা দিতেন। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দূর্লভ সরকার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী উনি আমাদের বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। এই বয়সে উনি পড়তে এসেছেন সেটা আমাদের কাছে গর্বের। উনি যেভাবে জুনিয়র ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিলেমিশে মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করছেন সত্যি আমরা খুশি। উপাচার্যের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ওনাকে আমরা বাংলা বিভাগে ভর্তি করি। ওনার প্রথম সিমেস্টারের ফি দেন রায়গঞ্জ থানার আইসি সৌরভ সেন। পরবর্তীতে ওনার কোর্স ফি সম্পূর্ণ আমরা মকুব করে দি।’