রাহুল মজুমদার ও জ্যোতি সরকার, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি: বেঙ্গল সাফারির জোড়া সিংহের (Bengal Safari Lions) নামকরণ ত্রিপুরায় (Tripura) হয়েছিল বলে আদালতে জানালেন রাজ্যের অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়জিৎ চৌধুরী। এর সপক্ষে তিনি আদালতে একটি নথি জমা দেন। সেই নথি অনুযায়ী, অ্যানিমাল এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় পশু হস্তান্তরের সময় ওই কাগজে দুই রাজ্যের আধিকারিকদের সিল এবং স্বাক্ষর রয়েছে। ওই কাগজে সিংহের (Lion) ঘরোয়া নাম আকবর এবং সিংহীর ঘরোয়া নাম সীতা লেখা রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, আকবর ও সীতার নামে দুই সিংহের নামকরণ না হলেই ভালো হত। সিংহীর নামবদল নিয়ে দায়ের হওয়া রিট আবেদনকে জনস্বার্থ মামলায় রূপান্তরিত করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি।
বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, শীঘ্রই ওই সিংহ জুটির নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা উচিত। যদিও রাজ্যের পক্ষে অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছেন, রাজ্য জোড়া সিংহের আবার নামকরণ করবে।
ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল সুদীপ্ত মজুমদার এদিন বলেন, ‘আদালতের পর্যবেক্ষণ এভাবে হিন্দু দেবদেবী বা কোনও মনীষীর নামে পশুর নাম রাখা উচিত নয়।’
শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে সিংহ জুটির নাম নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই ময়দানে নামে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে রিট পিটিশন দাখিল করে সিংহীর নাম পরিবর্তনের আর্জি জানানো হয়। বুধবার ওই মামলার শুনানি হয়। কে নামকরণ করেছে, আদৌ কী নামকরণ হয়েছে, তা জানতে চেয়ে সরকারের কাছে রিপের্ট তলব করেন বিচারপতি। বৃহস্পতিবার রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোেকট জেনারেল একটি প্রতিলিপি বিচারপতিকে দেন। ত্রিপুরা সরকারের দেওয়া ওই কাগজেই সিংহ এবং সিংহীর নাম লেখা রয়েছে। এরপরেই বিচারপতি মামলাটিকে রেগুলার বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সিংহ জুটির নাম বদল নিয়ে শুনানি হওয়া প্রয়োজন।
বিষয়টির বিরোধিতা করেন রাজ্যের অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল। বিচারপতি তখন বলেন, ‘মানুষের আবেগে আঘাত লেগেছে। সেকুলার দেশে সবার কথা বলার অধিকার রয়েছে।’ বিচারপতির আরও সংযোজন (রাজ্যের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে), ‘আমি গতকাল রাতে ভাবছিলাম কোনও পশুর কি এভাবে নাম হতে পারে? আমরা কোনও পোষ্যর নাম কি জু অথরিটির কোনও আধিকারিকের নামে রাখতে পারি? এই নামগুলি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের রাজ্যে এমনিতেই শিক্ষা সহ অনেক বিতর্ক রয়েছে। তাই আমি মনে করি রাজ্যের নতুন করে নামকরণ করা উচিত। শুধু সিংহী কেন, আমি মনে করি সম্রাট আকবরের নামেও নামকরণ উচিত নয়।’
মামলাকারী শুক্রবারের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র ঠিক করে জমা করলে ১০ দিনের মধ্যে যেন মামলাটি হাইকোর্টের রেগুলার বেঞ্চে যায়, তা নিশ্চিত করতে বলেন বিচারপতি।