রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: কংগ্রেসের (Congress) মতো এবার বিজেপির (BJP) নির্বাচনি ইস্তাহারেও ব্রাত্য রইল পাহাড়। ৭৬ পাতার ইস্তাহারে পাহাড়ের উল্লেখ না থাকায় সেখানকার রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, যাকে হাতিয়ার করে প্রচার শুরু করেছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম) সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্ট অবশ্য দাবি করেছেন, এবারের ইস্তাহার কোনও দাবিদাওয়া নিয়ে তৈরি হয়নি। ২০৪৭-এর বিকশিত ভারতকে মাথায় রেখে এই ইস্তাহার। তাঁর কথায়, ‘ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে থেকেই পাহাড় সমস্যার সমাধান হবে এবং জনজাতির সমস্যাও মিটবে।’
রাজুর বক্তব্যকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কার্সিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ওরফে বিপি বজগায়েন। তাঁর বক্তব্য, ‘এতদিন ভাঁওতা দিয়ে ভোট নিয়েছে বিজেপি। আমার আশঙ্কা, এবারও সাপ্লিমেন্টারি ইস্তাহার দিয়ে পাহাড় সমস্যা মেটানোর কথা বলতে পারে। কিন্তু মূল ইস্তাহারে যে বিষয় গুরুত্ব পায় না, সাপ্লিমেন্টারিতে তার গুরুত্ব নেই।’ বিজেপি গোর্খাদের স্বপ্নভঙ্গ করেছে বলে বিজিপিএমের মুখপাত্র কেশবরাজ পোখরেল মন্তব্য করেছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। সুবাস ঘিসিংয়ের পরবর্তী সময়ে বিমল গুরুংরা এই দাবিতে পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলেও আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিজেপি পাহাড়ের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে ২০০৯ থেকে পরপর তিনবার দার্জিলিং থেকে জয়ী হয়েছে। প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির মূল ইস্তাহারে গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ বা পাহাড় সমস্যা জায়গা না পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। বিতর্ক শুরু হতেই সাপ্লিমেন্টারি ইস্তাহার দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে পাহাড়ের দাবি মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে, যাতে কিছুটা হলেও ক্ষতে প্রলেপ পড়েছিল। ফলে পাহাড়ের মানুষ দাবি পূরণের স্বপ্ন নিয়ে বিজেপিকেই ভোট দিয়েছেন।
কিন্তু আজও পাহাড় সমস্যার সমাধান অধরা। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি আবার রাজুকেই প্রার্থী করেছে। রবিবার দিল্লিতে বিজেপির নির্বাচনি ইস্তাহার প্রকাশ করা হয়। ইস্তাহারে পাহাড় বা উত্তরবঙ্গ নিয়ে কোনও কথা বলা নেই। বিজেপি বারবার ভোট নিয়ে পাহাড় সমস্যা সমাধানের কথা ভুলে গিয়েছে বলে অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। এদিন ইস্তাহার প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। বিজিপিএমের মুখপাত্র কেশবরাজ বলেছেন, ‘স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলে বিজেপি বারবার পাহাড়বাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এবারের ইস্তাহারে পাহাড় নিয়ে কোনও উল্লেখ নেই।’
রাজুর পালটা যুক্তি, ‘প্রধানমন্ত্রী গত মাসেই এখানে বলে গিয়েছেন যে গোর্খাদের সমস্যা মেটানোর বিষয়টি দোরগোড়ায় এসে গিয়েছে। সেটাকে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। সংবিধানের মধ্যে থেকেই পাহাড় সমস্যা মিটবে।’
অন্যদিকে, সোমবার বিজিপিএমের ইস্তাহার প্রকাশের কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশের পরেই বিজিপিএম ইস্তাহার প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে।