জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়ি : উত্তরবঙ্গের আট জেলাতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে উঠেছে। গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরীণ বিরোধ বন্ধ না হলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফল ভালো হবে না। আরএসএস বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এমনটাই রিপোর্ট দিয়েছে। আরএসএসের তরফে মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার আলিপুরদুয়ার এবং কালিম্পং জেলাতে নির্দিষ্টভাবে কোন কোন এলাকাতে বিজেপির বিবদমান গোষ্ঠী সক্রিয় তা উত্তরবঙ্গের আরএসএসের ইউনিট থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জানানো হয়েছে।
আরএসএস সূত্রে খবর, আট জেলায় গড়ে বিজেপির তিনটি করে গ্রুপ সক্রিয়। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতে সুকান্তবাবুর অনুগামীদের সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের অনুগামীদের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। বারবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়ার কথা বলা হলেও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য দপ্তরে দলের জেলা কমিটিগুলির মাধ্যমে যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে আসন পিছু ন্যূনতম চারজন প্রার্থী রয়েছেন। আরএসএস কর্মীরা নীচুতলায় খোঁজ নিয়ে জানিয়েছেন, বিজেপির টিকিট না পেলে বিক্ষুব্ধরা বিজেপির সরকারি প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়াই করতে কোনও দ্বিধা করবেন না।
আলিপুরদুয়ার জেলায় বিজেপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নন। দলের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। জন বারলার সম্পদকে ঘিরেই মূলত প্রশ্ন ওঠার কথা আরএসএস নাগপুরে সংগঠনের হেডকোয়ার্টারে জানিয়েছে। দলের সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা পদত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। দলের নেতা মোহন শর্মা ততটা সক্রিয় নন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে চা বলয়ে বিজেপির প্রতি মানুষের সমর্থন থাকলেও সংগঠনের দুর্বলতার কারণে তা ভালো ফল করার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
উত্তরবঙ্গের আরএসএস নেতারা বিজেপির স্থানীয় স্তরের নেতাদের চলাফেরা এবং গণসংযোগের বিষয়ে সংগঠনের নেতৃত্বকে অবহিত করেছেন। যে সমস্ত নেতার ভাবমূর্তি জনমানসে খারাপ তাঁদের দলের সাংগঠনিক পদ থেকে দূরে রাখার কথা বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ময়নাগুড়ির বিধায়ক সম্পর্কে আরএসএস কোনও সুখকর রিপোর্ট সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দিতে পারেনি। ধূপগুড়িতে যেমন বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে তেমনি মেখলিগঞ্জেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রবল আকার ধারণ করেছে। আরএসএস রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, নব্য বিজেপি এবং প্রাক্তন বিজেপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে।
মালদা জেলাতে দলের টিকিট বণ্টন নিয়ে ইতিমধ্যেই নেতৃত্বের মধ্যে বিবাদ চরমে উঠেছে। উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী সংগঠনের সর্বক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে কাজ করার চেষ্টা করাতে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ।
আরএসএস নেতৃত্ব বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে, উত্তরের জেলাগুলিতে বিরোধ পুরোপুরি বন্ধ না হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হবে। আরএসএসের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব স্থির করেছে, আগামী জুন মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যদের উত্তরবঙ্গ সফরে পাঠাবে।