নকশালবাড়ি: দুই চোখেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তবে হার মানতে শেখেননি তিনি। জীবনে যতই প্রতিকূলতা আসুক না কেন সবটাকেই জয় করেছেন। এগিয়ে গিয়েছেন নিজের মতো করে। দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছেন তিনি। দৃষ্টিহীন বলে অনেকেই তাঁর কাছে ছেলে মেয়ে পড়াতে চায়নি। কিন্তু সেই দৃষ্টিহীন শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন শ্রুতি দাস, অঞ্জুলি প্রসাদ, অনিশা লাকড়ার মতো পড়ুয়ারা।
দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের যেমন তিনি নতুন দিশা দেখিয়েছেন তেমনি সাধারণ পড়ুয়াদের কাছে তিনি একজন অনুপ্রেরণা। চুক্তির ভিত্তিতে নকশালবাড়ি ব্লকের স্পেশাল এডুকেটর পদে তিনি কর্মরত। সপ্তাহের সাতদিন তিনি ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীদের পড়ান বছর ৫০-এর রাজকুমার নস্কর। নিজে দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও আর পাঁচজনের মতোই শিক্ষকতা করেন। তাও একেবারেই সাবলীলভাবে। দুই মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে রথখোলায় থাকেন রাজকুমারবাবু। সেখানেই গৃ্হশিক্ষকতা করেন তিনি। এবার ৮ জনকে তিনি পড়িয়েছিলেন। তারা প্রত্যেকেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যদিও রাজকুমারবাবু ইংরেজি বিষয় পড়ান। এদের মধ্যে শ্রুতি দাস মাধ্যমিকে ৬৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ইংরেজিতে ৮১ নম্বর পেয়েছে। অন্যদিকে, উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৩৩১ নম্বর পেয়েছে অনিশা লাকড়া। ইংরেজিতে পেয়েছে ৯০। কর্মসূত্রে নকশালবাড়িতে থাকতে হলেও রাজকুমারবাবুর আদি বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মগরা ব্লকে।
রাজকুমার নস্কর জানান, ছোটো থেকেই তিনি মোটামুটি মেধাবী ছিলেন। কিন্তু দৃষ্টিহীনতা তাঁর কাছে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার হলদিয়া বিবেকানন্দ মিশন ব্লাইন্ড স্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপরেই শুরু হয় জীবনসংগ্রাম। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় কলা বিভাগ নিয়ে গ্রামের বহরু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।
এরপর ফকির চাঁদ কলেজ থেকে স্নাতক এবং বিএড করেন ২০০০ সালে। ২০০৩ সালে সর্বশিক্ষা মিশনে চুক্তি ভিত্তিতে ব্লকের স্পেশাল এডুকেটর পদের কাজ যোগদান করেন তিনি। নকশালবাড়ি ব্লকের বিভিন্ন স্কুলে তিনি ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করছেন ছাত্রছাত্রীদের। ছাত্রী শ্রুতি দাস বলেন, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ওনার কাছে ইংরেজি পড়তাম। স্যারের প্রতিবন্ধকতা কোনদিন আমাদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি ব্রেইলি পদ্ধতিতে পড়ালেও আমাদের বুঝতে কোনদিন অসুবিধা হত না। প্রশ্ন করলেও ভালো করে বুঝিয়ে দেন।‘