অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: চাঁদা নিয়ে বিতর্কের জেরে ফাঁকা থাকল দর্শকাসন। সোমবার ময়নাগুড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (Mainaguri high school) প্ল্যাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হল হাতেগোনা ছাত্র আর জনাদশেক অভিভাবককে নিয়ে। স্বভাবতই মূল মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলন করতে উঠে ক্ষোভ ঝরে পড়ল রাজ্যের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইকের (Bulu Chik Baraik) গলায়। বক্তব্য রাখতে উঠে প্রকাশ্য মঞ্চেই পড়ুয়া, অবিভাবকদের উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বুলু।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে মাঠ ভর্তি পড়ুয়া, অভিভাবক থাকবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু, যাদের জন্য এই অনুষ্ঠান সেই পড়ুয়াদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এর থেকে মঞ্চের ওপরেই মনে হয় বেশি লোক আছে।’ শুধু বুলু নন, অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে এদিন প্রশ্ন তোলেন ময়নাগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্তদেব অধিকারীও। অনন্তর আক্ষেপ, ‘অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট খামতি রয়ে গিয়েছে।’
স্কুলটির প্ল্যাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এক বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পর শেষ পর্যায়ে বৃহৎ ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়। এদিন দুপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক, এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী, এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়, জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত সহ অন্যরা। প্রথমে প্রদীপ প্রজ্বলন ও পরে কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। স্বাগত ভাষণ রাখতে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিবব্রত রায় বিদ্যালয়ের ৭৫ বছরের গর্বের ইতিহাস তুলে ধরেন। এরপর বক্তব্য রাখতে উঠে দর্শকদের উপস্থিতি কম নিয়ে সরব হন বুলু। তাঁর কথায়, ‘রাজ্য সরকার এখন পড়াশোনোর সুবিধার্থে সবরকমের সহযোগিতা করছে। সেকারণে স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে এসে পড়ুয়াদের সেভাবে দেখতে পেলাম না। তাই কিছুটা হতাশ হলাম।’ প্রধান শিক্ষক শিবব্রত রায় অবশ্য অন্য যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘মাঠটি অনেকটাই বড়। পড়ুয়ারা কিছুটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তবে, সন্ধ্যায় প্রচুর ভিড় হয়েছে।’
অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এদিন বিদ্যালয়ের মাঠ নন্দনকানন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে শামিয়ানা খাটিয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি চেয়ার পাতা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের পড়ুয়া, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাক্তনীদের বসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর পর দেখা যায়, অধিকাংশ চেয়ারই ফাঁকা।
চাহিদামতো ৪০০ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় কিছু ছাত্রের ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শনিবার এব্যাপারে উত্তরবঙ্গ সংবাদে খবর প্রকাশিত হয়। এরপরে নিন্দায় সরব হয় বিভিন্ন মহল। পরে অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। তা সত্ত্বেও সেই ক্ষত মোছা যায়নি।
দুপুরের অনুষ্ঠানে দর্শক না থাকায় বিকেলে ময়নাগুড়ি শহরে ফের মাইকিং করে অনুষ্ঠানের প্রচার করা হয়। সন্ধ্যার পর প্রাক্তনীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুতুলনাচ ও বহিরাগত শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান হয়। সেসময় অবশ্য ভালো ভিড় হয়। প্ল্যাটিনাম জুবিলি (Platinum jubilee) উদযাপন কমিটির সভাপতি মনোজ রায়ের বক্তব্য, ‘সন্ধ্যার দিকে অনুষ্ঠানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আমাদের আশা, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে আরও ভিড় হবে।’