হলদিবাড়ি: ভোরের আলো ফুটলেও কুয়াশার (Fog) চাদর সরিয়ে তার দেখা মেলা ভার। শীত আক্ষরিক অর্থেই হাড় কাঁপাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে লেপ সরিয়ে বিছানা থেকে নীচে নামতে কারও ইচ্ছেটাই করবে না। রাঙ্গাপানি কলোনি গ্রামের বাসিন্দা দীপশিখা মণ্ডল, জেসমিন খাতুনদের মনে অবশ্য এই ইচ্ছেটা আসে। আসবেই তো। ওদের যে স্কুলে যেতে হয়। হাড়কাঁপানো শীতে অবশ্য অনেককেই স্কুলে যেতে হয়। দীপশিখাদের ক্ষেত্রে বাড়তি বলতে, ওদের ওই সাতসকালেই বুড়িতিস্তায় নেমে জলে পা ভিজিয়ে তবেই স্কুলের পথে রওনা হতে হয়। রোজ রোজ একই ঘটনার জেরে সর্দিকাশিতে (cold and cough) ভুগে ওদের ভোগান্তির একশেষ।
হলদিবাড়ি (Haldibari) ব্লকের দক্ষিণ বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন রাঙ্গাপানি ও রাঙ্গাপানি কলোনির মাঝখান দিয়ে বুড়িতিস্তা বয়ে গিয়েছে। নদী থাকলেও তা পারাপারে এলাকায় কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই জেসমিনদের মতো এলাকার সবাইকেই নদীতে নেমে তা পারাপার করতে হয়। সমস্যাটি বহুদিনের পুরোনো। বর্তমান পরিস্থিতিতে বহুদিনের পুরোনো এই সমস্যাটি মেটানোর দাবি জোরালো হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, নদী পারাপারের জন্য বেশ কয়েক বছর আগে এলাকায় একটি বাঁশের সাঁকো গড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই সাঁকোটি ভেঙেচুরে গেলে সমস্যা যে-কে-সেই। হলদিবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শৈলবালা রায় বললেন, ‘নদী পারাপারের জন্য ওই এলাকায় একটি ফুটব্রিজ তৈরিতে চ্যাংরাবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।’ সমস্যার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হলদিবাড়ির বিডিও রেনজি লামো শেরপা আশ্বাস দিয়েছেন।
বুড়িতিস্তা রাঙ্গাপানি কলোনি গ্রামটিকে দক্ষিণ বড় হলদিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করে রেখেছে। নদীর এক প্রান্তে বালাডাঙ্গা-শিমুলতলি প্রাথমিক ও জুনিয়ার হাইস্কুল সহ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। নদী পারাপারে দীপশিখাকে পায়ের জুতো খুলে নদীতে নামতে হয়। জেসমিন বলল, ‘বছরের পর বছর ধরে এমনটাই চলে। শীতকালে এভাবে নদীতে নামার জেরে আমাদের প্রায়ই শরীর খারাপ হচ্ছে।’ শীতকালটায় নদীতে নেমে তা পারাপার করা গেলেও বর্ষাকালে অবশ্য সেই সুযোগ থাকে না। সেই সময়টায় অনেকটাই ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয় বলে দীপশিখাদের মতো অনেকেই স্কুল কামাই দেয় বলে বালাডাঙ্গা-শিমুলতলি উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজা সরকার জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী মধু সরকার, ললিতা রায়, আমিনা বেগমদের অভিযোগ, সমস্যার বিষয়ে জানা থাকা সত্ত্বেও সমাধানে প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বুড়িতিস্তা পারাপারে কোনও সেতু না থাকায় শুখা মরশুমে নদী পেরিয়ে যাতায়াত করা গেলেও ভরাবর্ষায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে রাঙ্গাপানি মহাশ্মশান সেতু হয়ে যাতায়াত করতে হয়। এর জেরে একদিকে যেমন বেশি সময় লাগে, অন্যদিকে বেশ খরচও হয়। বাসিন্দাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে, র্যাশন (Ration) তুলতে বা হাসপাতাল, পঞ্চায়েত অফিস, বিডিও অফিস, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি ব্যংকে যেতেও চূড়ান্ত হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর দাবি জোরালো হয়েছে। সমস্যা মেটাতে প্রশাসন পদক্ষেপ না করলে বাসিন্দারা বড়সড়ো আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন।