গৌরহরি দাস, কোচবিহার: রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর শিক্ষকতার চাকরি ইস্যুতে ফের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক)-কে তলব করল সিবিআই। জানা গিয়েছে, দুই ডিআইয়ের পাশাপাশি অঙ্কিতার যে স্কুলে চাকরি হয়েছিল, মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রঞ্জনা রায় বসুনিয়াকেও ডেকেছে সিবিআই। বিশেষ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার কলকাতার নিজাম প্যালেসে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই। সেখানে হাজিরা দিতে সোমবার বন্দে ভারতে তাঁরা কলকাতায় রওনা হবেন। অঙ্কিতাকে যে নিযোগ করা হয়েছিল, সেইসময স্কুলে একশো শতাংশ রোস্টার মানা হয়েছিল কিনা সেটাও সিবিআই খতিয়ে দেখতে চায়।
প্রসঙ্গত, একই ইস্যুতে গত নভেম্বর মাসের শুরুতেও কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এই দুই জেলার ডিআইকে তলব করেছিল সিবিআই। সেবার অবশ্য তাঁরা সিবিআইয়ের কাছে শিলিগুড়িতে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তাঁদের সরাসরি কলকাতার নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বিষযটি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সমরচন্দ্র মণ্ডল জানান, সিবিআই ডেকেছে। তাঁরা কিছু তথ্য চেয়েছে। সেই তথ্য তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। একই কথা বলেন জলপাইগুড়ি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বালিকা গোলেও। ২০১৮ সালে স্কুল সার্ভিস নিয়োগের জন্য মেধাতালিকা প্রকাশ না করেই সরাসরি কাউন্সেলিং শুরুর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এসএসসি। এসএসসির সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে মেধাতালিকা বাধ্যতামূলক করা হয়। সেই সময় কোচবিহারে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিযোগের জন্য এসএসসি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা গিয়েছিল তপশিলি জাতিভুক্তদের জন্য মেধাতালিকার ওয়েটিং লিস্টে প্রথম নাম ছিল পরীক্ষার্থী ববিতা বর্মনের। তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে লোপামুদ্রা মণ্ডল ও ছায়া রায়ের নাম ছিল।
২৩ জনের সেই তালিকায় পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর কোনও নাম ছিল না। অথচ ২০১৮ সালের ১৭ অগাস্ট পরেশ অধিকারী ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তণমূলে ঢোকার পরই সেই তালিকার পরিবর্তন দেখা যায়। তিনি যোগ দেওয়ার তিন-চারদিনের মধ্যেই দেখা যায় ববিতা, লোপামুদ্রাদের সরিয়ে সেই তালিকায় নাম না থাকা অঙ্কিতা অধিকারীর নাম একেবারে প্রথমে চলে আসে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বিষযটি নিয়ে রাজ্যজুড়ে হইচই পড়ে যায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সেই সময় বিষয়টি নিযে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানান। কিন্তু এত কিছুর পরও কিছু হয়নি। বরং ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর অঙ্কিতা মেখলিগঞ্জে তাঁর বাড়ি থেকে একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালযে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগ দেন। এই অবস্থায় গতবছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে অঙ্কিতা অধিকারীকে তাঁর চাকরি খোয়াতে হয। তাঁর জায়গায় ববিতাকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। যদিও কয়েকমাস চাকরি করার পর ববিতার নম্বরেও কিছু গণ্ডগোল ধরা পড়ে। ফলে আদালতের নির্দেশে ববিতা বর্মনেরও চাকরি যায।
এই অবস্থায় অঙ্কিতার চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে সিবিআই ফের দুই ডিআই ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে তলব করায় বিষযটি নিযে ফের জলঘোলা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে অঙ্কিতার চাকরি সংক্রান্ত বিষয় নিযে এই দুই ডিআইকে কেন বারবার তলব করছে সিবিআই। অঙ্কিতার চাকরীর সঙ্গে তাঁদের কি যোগসূত্র রয়েছে? বিষযটি নিযে শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে অঙ্কিতার যখন চাকরি হয়েছিল, সেইসময় কোচবিহারের ডিআই ছিলেন বালিকা গোলে। অর্থাৎ যিনি এখন জলপাইগুড়ি জেলার ডিআই পদে রয়েছেন।
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকরির চাকরীর কাগজপত্র সমস্ত কিছু এসএসসি দপ্তর থেকে এলেও ডিআই হিসাবে অ্যাপ্রুভাল তাঁরই দেওয়ার নিয়ম। অপরদিকে কোচবিহারে সমরচন্দ্র মণ্ডল নামে বর্তমান যিনি ডিআই রয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী অঙ্কিতার চাকরির ক্যানসেলেশন তাঁরই করার কথা। ফলে তাঁদের কাছে সে সমস্ত কাগজপত্র ও তথ্য থাকার কথা, সম্ভবত সে কারণেই তথ্য চেযে এই দুই ডিআই ও প্রধান শিক্ষিকাকে সিবিআই তলব করেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে অঙ্কিতার পর ববিতার চাকরি যাওয়ার পরেও সিবিআই হঠাৎ করে আবার এই বিষয় নিয়ে কেন নাড়াঘাটা শুরু করল। জানা গিয়েছে, অঙ্কিতার চাকরি কেমন করে হল, কিভাবে হল, কোথা থেকে কি আসল, অঙ্কিতার চাকরি পাওযার পেছনে মূল অপরাধী কে? এরসঙ্গে যুক্ত আরও কে কে আছে, সবটা নিয়ে সিবিআই তদন্ত করছে। মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রঞ্জনা রায়বসুনিযা বলেন, ‘এর আগে যা ডকুমেন্টস দেওয়া হয়েছিল সেগুলিই আবার সিবিআই চেয়েছে।’