সুভাষ বর্মন, পলাশবাড়ি: ক’দিন ধরে স্কুলে যাচ্ছে না নবম শ্রেণির অলোক বিশ্বাস। গোটা চৈত্র মাসেই সেভাবে স্কুলে যাওয়া হবে না। কারণ, এখন অলোকের মতো পড়ুয়ারাই সন্ন্যাসী সেজে হাট, বাজারে ঘুরছে। সঙ্গে রয়েছেন পেশায় কৃষক রতন দাসদের মতো বড়রাও। কেউ ঢাক বাজাচ্ছেন। কারও হাতে ‘মাগন’ তোলার বাটি। রতনরা অবশ্য ভোট দেবেন। তবে এখন ভোট নিয়ে কারও তেমন উদ্দীপনা নেই। চাষের কাজ ফেলে চড়ক পুজো নিয়েই সবাই ব্যস্ত। শনিবার আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের শিলবাড়িহাটে এরকম অনেক সন্ন্যাসীর দলকে দেখা গেল ‘মাগন’ তুলতে। এই হাটে এখনও কোনও দলের প্রার্থী ভোটের প্রচারে আসেননি। বরং এদিন ঢাকের আওয়াজ বলে দিল যে, চড়কপুজো আসন্ন।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমারহাট, পূর্ব কাঁঠালবাড়ি,পাতলাখাওয়া সহ বেশকিছু এলাকায় প্রতি বছরেই চড়কমেলা হয়। এই ব্লকের পাশে কালীপুর, রাইচেঙ্গা, আসাম মোড়, বংশীধরপুরেও চড়ক পুজো হয়। এই পুজো ও মেলা হয় চৈত্রমাসের সংক্রান্তিতে। তার আগে গোটা চৈত্র মাস ধরে চলে ‘মাগন’ তোলার পালা। এজন্য ছোট-বড় উদ্যোক্তারা সন্ন্যাসী সেজে হাট-বাজারে আসেন। নিজের এলাকায় বাড়ি বাড়িও যান। এই ব্লকের মধ্যে বড় হাট হল শিলবাড়িহাট। তাই গাজনের শুরুতে এই হাটেই আসা শুরু করেছেন সন্ন্যাসীরা। আর এজন্য পড়ুয়াদের একাংশ স্কুল যাচ্ছে না। অন্য পেশার সন্ন্যাসীরা নিজের কাজ বাদ দিচ্ছেন।
এদিন গুমানি হাট থেকে আসা অলোক দাসের হাতে ছিল শিব ঠাকুরের ছোট মূর্তি। অলক কথায়, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ি। বাড়ির পাশের চড়ক মেলার সঙ্গে বাবাও যুক্ত। তাই এই মাসে সেরকম স্কুলে যাওয়া হবে না। এখন এভাবেই হাটে হাটে শিব ঠাকুর নিয়ে ঘুরতে হবে। তবে স্কুল কামাই দিলেও রাতে বাড়িতে বই পড়ি।’ আরেক দলের স্কুল পড়ুয়া প্রীতম দাস, কানাই দাসদেরও একই কথা। প্রীতমের কথায়, ‘এভাবে ঘুরতে মজাও লাগে। বাবা, মাও এতে আপত্তি জানায় না। আর মাসের শেষে চড়ক পুজোয় তো ভীষণ আনন্দ হয়।’
তবে পড়ুয়াদের পাশাপাশি অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত বড়রাও এভাবে সন্ন্যাসী সেজে এদিন হাটে আসেন। তাঁদের মধ্যে পেশায় চাষি রতন দাসের কথায়, ‘এমনিতে কৃষিকাজ করি। এখন গাজনের জন্য হাটবাজারে সন্ন্যাসী সেজে আসতে হচ্ছে।’ রতি দাস নামে এক তরুণের হাতে ঢাক। তিনি অবশ্য বাজনা দলের সঙ্গেই যুক্ত। বিয়েবাড়ি সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে বাজনার কাজ করেন৷ এখন চৈত্র মাস। তাই বিয়ে নেই। রতির কথায়, ‘এজন্য গোটা মাসে সন্ন্যাসী হিসেবে ঢাক বাজাতে কোনও সমস্যা হয় না। ছোট থেকেই নিজের এলাকার চড়ক মেলার জন্য এভাবে কাজ করি।’