আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার শহরের এক ঝাঁক খুদে হাত পাকিয়েছে নানা দুষ্কর্মে। তাদের নিয়েই উদ্বেগে রয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। সেই নাবালক গ্যাংয়ের ছিঁচকে চুরিচামারি নিয়ে পুলিশকর্তারা যতটা না চিন্তিত, তার থেকে অনেক বেশি চিন্তিত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। এসব নাবালক বারবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। চরিত্র সংশোধনের জন্য তাদের হোমে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। বারবার হোমে পাঠিয়েও দুষ্কর্মের অভ্যাস দূর হচ্ছে না।
পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জনা তিনেক নাবালককে পাকড়াও করে সব মিলিয়ে তিনবার হোমে পাঠানো হয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলারই কামাখ্যাগুড়ির তপোবন হোম ছিল তাদের চরিত্র সংশোধনের ঠিকানা। সেখানে মাসকয়েক কাটাবার পর যখনই মনে করা হয়েছে যে তারা বদলে গিয়েছে, তখনই ঘটেছে ঠিক উলটোটা। হোম থেকে শহরে ফিরে এসে আবার ‘স্বমূর্তি’ ধরেছে তারা। চুরির মতো দুষ্কর্মে যুক্ত হয়ে পড়ছে, জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশকর্তারা অবশ্য এখনও আশাবাদী। আলিপুরদুয়ার থানার আইসি অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা ভেবেই আমাদের এই উদ্যোগ। সিডব্লিউসির মাধ্যমে নাবালকদের হোমে পাঠানো হয়। আমরা চেষ্টা করছি যাতে তারা সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারে।’
আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডেই এসব খুদের আস্তানা। পাঁচ-সাতজনের একটি দল রয়েছে। এক সময় এদের মধ্যে জনাচারেক তো স্কুলেও ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসেছে। অভিভাবকরাও খোঁজখবর রাখেন না। প্যারেড গ্রাউন্ড সহ সংলগ্ন এলাকার ছাউনির নীচে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে তাদের। আর রাতে শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকা চষে বেড়ায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নাবালক গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ফাঁকা বাড়িঘরে ঢুকে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে স্কুলের অফিসঘরেও ঢুকেছে তারা। একাধিক চুরির অভিযোগ উঠেছে। নাজেহাল হতে হয়েছে পুলিশকেও। এর আগে একবার চারজনকে হোমে পাঠানো হয়। দ্বিতীয়বার পাঠানো হয় পাঁচজনকে। গত মাসের মাঝামাঝি দুজনকে হোমে পাঠানো হয়েছে। বাকি আরও দুই থেকে তিনজনকে হোমে পাঠানোর পরিকল্পনা থাকলেও তারা টের পেয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। হোমের পরিবেশে তারা শান্ত হয়ে থাকে। ছাড়া পেলেই আবার যে-কে-সেই।
পুলিশ বলছে, অভিভাবকদের নজরদারির বালাই নেই। শহরে ফিরে সঙ্গীদের পেয়েই আবার পুরোনো পথে পা বাড়াচ্ছে। কেবল পুলিশ নয়, নাবালক গ্যাংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শহরর বাসিন্দারাও। বিশিষ্ট নাগরিক প্রমোদ নাথ বলেন, ‘নাবালক-নাবালিকারা এখন ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে ঠিকই, তবে পরে তারা বড় অপরাধীও হতে পারে। পুলিশ যা করছে, সেটা তো ভালোই, তবে তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিলে হয়তো তারা জীবনের দিশা খুঁজে পাবে।’